শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর তাণ্ডবে রাঙ্গুনিয়ায় বোরোর পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছিল। এরপরেও রাঙ্গুনিয়ায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আবাদের তুলনায় সামান্য বলে উল্লেখ করছেন কৃষি অফিস। এখনো ক্ষতি বাদ দিলেও ৫৩ হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ায় বোরো ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৩১৫ হেক্টর। কৃষকরা আবাদ করেছেন ৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। পাকা ধান ঘরে তোলার সময় প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিজনিত কারণে কিছু কিছু কৃষকের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে তীব্র তাপদাহের মধ্যেই এখন চলছে ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ। ক্ষতি বাদেও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক পথে মরিয়মনগর চৌমুহনী পেরুতেই সড়কের দুই ধারে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষক। মাঠের প্রায় ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। শেষ পর্যায়ে কেউ ধান কাটছেন, আবার অনেককে বিল থেকে ধান কেটে ঘরে আনতে দেখা গেছে। পাকা ধান খেতে টিয়েসহ নানা জাতের পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে মাঠে। কৃষকরা জানান, গুমাইবিলে অন্তত ১০ হাজার কৃষক বোরো চাষ করেছেন। তারা পানি, সার, বীজ পেয়েছেন সময়মতো। বৃষ্টিতে কিছু জমির ক্ষতি হলেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ন্যায্য দাম পেতে সরকারি সহায়তা কামনা করেন তারা।
গুমাই বিলে কর্মরত উপ–সহকারী কৃষি অফিসার উত্তম কুমার বলেন, নতুন নতুন জাতের আবাদ হওয়ায় এবার বোরো ধানের বেশ ভালোই ফলন এসেছে। বিশেষ করে ব্রীধান–৮৯, ৯২, ১০০ (বঙ্গবন্ধু), বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে। গড়ে ৬ টন করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগরে গুমাইবিলে ১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন কৃষক মো. ফরিদ। তিনি জানান, ফলন ভালো হয়েছে। পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। ঝড়–বৃষ্টিতে কিছু ধান ক্ষতি হয়েছে। এরপরও যা পেয়েছি তা দিয়ে মোটামুটি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। মরিয়মনগর এলাকার কৃষক মো. নুর উদ্দীন জানান, তিনি ৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ব্রি–৮৮ জাতের ধান চাষ করেছেন ৫ হেক্টর জমিতে। এখন জমি থেকে গরমের মধ্যেই ধান কাটা চলছে। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৬ টন করে ধান পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বোরো মৌসুমে আবাদের পরিমাণ দেখে খুশি চন্দ্রঘোনা পাটানপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। তিনি বলেন, গত মৌসুমে বন্যা, পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমনের ফলন ভালো হয়নি। তাই নতুন ভাবে বোরো ধানের চাষ করে করেছি। আল্লাহর রহমতে এবারের ফলন ভালো হয়েছে।
মো. রেজাউল করিম নামে অন্য এক কৃষক জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে বিক্রির ঝড়ঝাপ্টা না পোহাতে অনেকেই বাধ্য হয়ে অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দেয়। তাই এবার যেন কৃষকরা বাজারেও ভালো দাম পায়, সেজন্য বাজার মনিটরিং করা দরকার।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, উপজেলার ৭০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। গড়ে ৬ টন করে ফলন হয়েছে। ঝড়–বৃষ্টিতে ক্ষতি বাদ দিয়েও ৫.৭ টন করে গড় ফলন হিসেব করলেও তাতে ৫৩ হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।