আজাদ রহমান (১৯৪৪–২০২০)। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীত পরিচালক জীবন্ত কিংবদন্তী সংগীত গুরু। তিনি একাধারে সংগীত পরিচালক, শিল্পী, গীতিকার, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি বিশিষ্ট এই সংগীত ব্যক্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়ালে অনার্স সম্পন্ন করেন। কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘মিস প্রিয়ংবদা’র সংগীত পরিচালনার মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রের গানে তার সম্পৃক্ততা ঘটে। এই ছবিতে তার সংগীত পরিচালনায় গান গেয়েছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরতী মুখার্জি। বাংলাদেশে তিনি প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘আগন্তুক’ ছবিতে। এরপর বাদী থেকে বেগম, এপার ওপার, পাগলা রাজা, অনন্ত প্রেম, আমার সংসার, মায়ার সংসার, দস্যুবনহুর, ডুমুরের ফুল, মাসুদ রানা, রাতের পর দিনসহ প্রায় সাড়ে তিনশো ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে ভালোবাসার মূল্য কতো সেতো আমি জানি না, ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায় সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে তার কণ্ঠে। বাংলা একাডেমি থেকে আজাদ রহমানের লেখা দুটি বাংলা খেয়ালের বই প্রকাশিত হয়েছে। বই দুটি হচ্ছে ‘বাংলা খেয়াল–প্রথম খণ্ড’ ও ‘বাংলা খেয়াল–দ্বিতীয় খণ্ড’। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কিত প্রথম চলচ্চিত্র তিনিই নির্মাণ করেন। ছবিটির নাম ‘গোপন কথা’। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’–এর মত উল্লেখযোগ্য দেশাত্মবোধক গানের সুর করেছিলেন। তাঁর যে গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে তা হলো – ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’, ‘আকাশ বিনা চাঁদ’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’, ‘বন্দী পাখির মতো’, ‘অলিরা গুনগুন গুনগুন গুনগুনিয়ে’, ‘ওই মধু চাঁদ আর এই জোসনা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৬মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।