আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনএসবির সভা করার চেষ্টা ডা. রবিউল হোসাইনের, বন্ধ করে দিল পুলিশ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ মে, ২০২৪ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

প্রচলিত নিয়ম না মেনে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি), চট্টগ্রাম শাখার কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠানের চেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। গতকাল খুলশী থানার পুলিশ গিয়ে সভাটি বন্ধ করে দেয়। অন্ধ কল্যাণ সমিতির অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক ডা. রবিউল হোসাইন উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুটিকয়েক সদস্য নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই সদস্য সরে যান।

কার্যকরী পরিষদের সিনিয়র একাধিক সদস্য এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি চট্টগ্রাম শাখার জন্য এ দিনটি একটি কলংকময় দিন। সংগঠনের দীর্ঘদিনের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার কোনো নজির নেই। তারা বলেন, ডা. রবিউল হোসাইনের তুঘলকি কারবারের জন্য সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ন হলো। ডা. রবিউল হোসাইন নিজের দুই পুত্রকে নিয়ে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালসহ বিএনএসবিকে কুক্ষিগত করার কুমতলবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৭ সদস্যের কমিটির মধ্যে নিজের পুত্রসহ মাত্র ৫ জনকে নিয়ে কথিত সভা অনুষ্ঠানের চেষ্টা করেছিলেন।

বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি এম এ মালেক। অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক ডা. রবিউল হোসাইন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির সাথে আলোচনা করে এজেন্ডা ঠিক করার পর সেক্রেটারি ইসি কমিটির সভা আহ্বান করেন। কিন্তু সেক্রেটারি ডা. রবিউল হোসাইন সংস্থার সভাপতি এম এ মালেকের সাথে আলোচনা না করে ইসির ১৭১তম সভা আহ্বান করেন। সভার নোটিশ পাওয়ার পর এম এ মালেক লিখিতভাবে নিজের কিছু ব্যস্ততার কথা উল্লেখ করে সেক্রেটারিকে কয়েকদিন পর আলাপ আলোচনা করে এজেন্ডা ঠিক করে সভা আহ্বানের অনুরোধ করেন। কিন্তু সভাপতির আহ্বানের উত্তর না দিয়ে ডা. রবিউল হোসাইন ১৪ মে বিকেল ৪টায় ইসি কমিটির ১৭১তম সভার নোটিশ দেন। এতে আদালতে বিচারাধীন কয়েকটি বিষয়ও এজেন্ডাভুক্ত করা হয়।

প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ না করে আদালতে বিচারাধীন বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করে সভা আহ্বানে সংক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতি এম এ মালেক আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত সভা অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু গতকাল আদালতের নোটিশ নিয়ে যাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে নোটিশ গ্রহণ না করে কৌশলে তাদের বসিয়ে রেখে ইসি কমিটির সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেন ডা. রবিউল হোসাইন। ১৭ সদস্যের ইসি কমিটির বৈঠকে নিজের পুত্র রিয়াজ হোসেন ছাড়া আর মাত্র তিনজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা হচ্ছেন জাহাঙ্গীর আলম খান, ডা. কিউ এম অহিদুল আলম ও এস দোহা চৌধুরী।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সভা অনুষ্ঠানের খবরে ইসি কমিটির কয়েকজন সদস্য আইনজীবীসহ খুলশী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হলে পুলিশ পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে যায়। গেট থেকে পুলিশ আসার খবর পেয়ে ডা. কিউএম অহিদুল আলম ও এস দোহা চৌধুরী পাশে অন্য একটি রুমে গিয়ে বসে থাকেন। পুলিশ ডা. রবিউল হোসাইনকে আদালতের নির্দেশের কথা বলে ইসি কমিটির সভা না করার নির্দেশ দেন। পুলিশি তৎপরতায় ইসি কমিটির কথিত সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়।

গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনএসবিতে থাকা ইসি কমিটির একাধিক সদস্য গতকাল আজাদীকে বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। ডা. রবিউল হোসাইন গত ৫০ বছর ধরে বিএনএসবি এবং পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করছেন। তিনি অনৈতিকভাবে তার দুই পুত্রকে একই ধারায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানা ধরনের শঠতার আশ্রয় নিচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রচলিত নিয়ম কানুন না মেনে তার অনুগত তিনজন সদস্য নিয়ে ইসি বৈঠক করার অপচেষ্টা করেন। পুলিশ গিয়ে তা ভণ্ডুল করেছে। এর মাধ্যমে ডা. রবিউল দেশের অন্যতম কল্যাণমুখী একটি সংগঠন বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর নজির স্থাপন করলেন। তারা এই ধরনের ঘৃন্য তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

তারা বলেন, কারো ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির মতো একটি সংগঠন ব্যবহৃত হতে পারে না। সমিতির সদস্যরা এসব মেনে নেবেন না বলে ইসি কমিটির সিনিয়র সদস্যরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

গতকালের ইসি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠান এবং পুলিশি উপস্থিতিতে সরে যাওয়ার ব্যাপারে ডা কিউএম অহিদুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আদালতের নির্দেশ অনুষায়ী বিএনএসবির ইসি কমিটির সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে খুলশী থানা পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে মদের কারখানায় ডিবি পুলিশের হানা, গ্রেফতার ২
পরবর্তী নিবন্ধসুস্থভাবে ২৩ নাবিকের দেশে ফেরা বাংলাদেশেরই জয়