পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথ খনন নিয়ে ফের আলোচনা উঠেছে। বৈঠকে হ্রদের নৌ–পথ খনন, শুষ্ক মৌসুমে অবৈধভাবে বেদখল রোধ ও হ্রদ সংরক্ষণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বৈঠক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত রোববার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাঙামাটি জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবাইদা আক্তার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, জেলা তথ্য অফিসের উপপরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ রাঙামাটির ১০ উপজেলার ইউএনওরা।
বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় চর–ডুবোচর দেখা দিয়েছে। এতে করে নৌ–যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় হ্রদের নৌ–পথে ড্রেজিং জরুরি হয়ে পড়েছে। বৈঠকে এই আলোচনা উঠার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিংয়ের জন্য ৯৭৭ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে হ্রদের নৌ–পথে ড্রেজিং শুরু হবে। রাঙামাটি জেলার খেলাধুলার মানোন্নয়নে এখানে বিকেএসপির শাখা প্রতিষ্ঠা করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন–৪০ একর জায়গার সন্ধান করতে। জায়গার সন্ধান পেলে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বৈঠকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক–অবকাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত জেলার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে জানান, বৈঠকে কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে খনন নিয়ে আলোচনা হলেও সেটি মূলত লংগদু থেকে বাঘাইছড়ি মারিশ্যা পর্যন্ত নৌ–পথ খননের প্রকল্পটির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের মূল অংশের ড্রেজিং কিংবা পুনঃখনন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের বেদখল প্রতিরোধ ও হ্রদ সংরক্ষণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন নৌ–পথ খনন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ব্লক বসানো, বাঁধ নির্মাণসহ হ্রদ রক্ষায় একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্প প্রস্তাবটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে আটকে আছে। কাপ্তাই হ্রদের নৌ–পথে ড্রেজিং নিয়ে চলতি বছরে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও দাবিটি উত্থাপিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে চর জাগার কারণে রাঙামাটির ছয়টি উপজেলার সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। গত ২৭ এপ্রিল থেকে রাঙামাটির ছয় উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে যাত্রী পরিবহন করা যাচ্ছে। তবে নৌ–পথে যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।