কক্সবাজারে জনপ্রিয় উঠেছে সরিষা আবাদ। প্রতি বছর জেলাজুড়ে বাড়ছে সরিষা আবাদের ক্ষেত্র। চলতি মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন সরিষা। যার বাজার মূল্য ১৪ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার ২৫০ টন বেশি সরিষা উৎপাদন হয়েছে। গেল বছর সরিষা উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এতে কৃষকের আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা।
কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, কঙবাজারে দিন দিন বাড়ছে সরিষা চাষ। কৃষকেরা চাষ করছেন উন্নত জাতের সরিষা। তাই গত বছরের তুলনায় এবার সরিষার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। এতে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভোজ্য তেলে চাহিদা বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ৮ উপজেলায় ৩ হাজার ২০০ চাষীকে প্রণোদনা হিসেবে সরিষা বীজ ও সার দেয়া হয়। অনেকেই নিজ উদ্যোগে আবাদ করেছেন।
২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৩৭০ হেক্টর। ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২৫ হেক্টর। যেখানে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ২০৩ হেক্টরে। এক বছরের ব্যবধানে ৮৯৮ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। তার মধ্যে চকরিয়ায় ৭৫০ হেক্টর, পেকুয়া ৩৫০ হেক্টর, রামুতে ২০০ হেক্টর, সদরে ২০০ হেক্টর, উখিয়ায় ৬০ হেক্টর, টেকনাফে ১৭৫ হেক্টর, মহেশখালীতে ৬০ হেক্টর এবং কুতুবদিয়ায় ২৮ হেক্টর।
চাষীরা জানিয়েছেন, সরিষা তেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সরিষার দামও ভালো পেয়েছেন তারা। বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আয় হয়েছে ভালো। ৭৫ দিনের ফসলটিতে সেচেরও কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বিঘা প্রতি তাদের খরচ পড়েছে ৩/৪ হাজার টাকা। সব খরচ বাদে ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন কৃষকেরা। ঈদগাহ উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের কৃষক শাহিদুল আলম ১৭ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রণোদনার আওতায় সার বীজ পেয়ে চলতি বছর তার উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় মোট ৩৫ হাজার টাকা। প্রায় দুই মেট্রিক টনেরও বেশি সরিষা উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
চকরিয়ার কৃষক কামাল মিয়া শাক সবজির পাশাপাশি ২০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ২০ বিঘা জমি থেকে আড়াই মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকারও বেশি।
কঙবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী আশিষ কুমার দে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হয়েছে। ১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৫০ টন বেশি। এতে কৃষকদের আয় হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (সদ্য বদলি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের তুলনায় সরিষা আবাদ বেড়েছে। এতে কৃষকেরা বেশি লাভবান হয়েছেন। বলা যায়, অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ। এছাড়া দেশে সরিষার চাহিদা থাকার কারণে কৃষকেরা বাজারে ভালো দাম পেয়েছেন। একজন কৃষক বিঘা প্রতি ৫/৬ মন সরিষা পেয়েছেন।