সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমাতে পূর্ণাঙ্গ সড়ক আইন শিগগিরই সংসদে পাস করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, নতুন আইনে চালক–সহকারী, পরিবহন মালিক এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কে কোন দায়িত্বে থাকবেন এবং কোন ধরনের গাফিলতিতে কী ধরনের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সব কিছুই পরিষ্কার করা হয়েছে। আমরা চাই দুর্ঘটনায় আর যেন কেউ মৃত্যুবরণ না করে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচার) দ্বিবার্ষিক মহাসমাবেশে কথা বলছিলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বিআরটিএর তথ্যমতে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন গড়ে ১৪ জন। আমাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় কম–বেশি ৫ হাজার ২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহতও হয়েছেন ঠিক সেরকমই একটি সংখ্যা। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮’ সংসদে পাস হয়। তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সাজা দুই বছর বাড়িয়ে আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে এটির প্রবল বিরোধিতা করে আসছিল পরিবহন মালিক–শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি। গত মার্চে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য চালক ও তার সহকারীদের জেল–জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনে সায় দিয়েছে সরকার। এখন তা আইন প্রণয়নের কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংসদে পাস করা হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, একটা আধুনিক শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতেই হয়। তাহলে তাকে আধুনিক শহর বলে। কিন্তু, আমাদের দেশে কোনো শহরেই ২৫ শতাংশ সড়ক নেই। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে বলেছিলেন, আমরা ঢাকাকে যানজট মুক্ত করব। এবং তিনি মেট্রোরেল, এঙপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের কথা বলেছিলেন। আজকে সেগুলো সবই দৃশ্যমান হয়েছে। এবং এর ফলে যানজট অনেকটাই কমে এসেছে। আমরা চাই এটাকে আরও কমাতে।
সচেতনতার অভাবেই মূলত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেকেই আইন জানি, কিন্ত মানি না। চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, আমরা দক্ষ চালকের হাতে স্টিয়ারিং রাখতে চাচ্ছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ির দিকেও আমরা খেয়াল রাখছি। এছাড়া, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ বিবিধ কারণ রয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, কোভিড মহামারীর সময়ে এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবরে আমরা সাবধান হয়েছি। কিন্তু, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। ১০ এর নীচে কোনোদিন পাচ্ছি না। এ বছর সর্বোচ্চ ৩৭ জন একদিনে মারা গেছে। আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে, সচেতন হতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে সারাদেশের নিসচার সদস্য ও কর্মীরা অংশ নেন।