মানিকগঞ্জে শায়িত হলেন স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ

কর্ণফুলীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা

| শনিবার , ১১ মে, ২০২৪ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিজ জেলা মানিকগঞ্জেই শায়িত হলেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারানো বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে মানিকগঞ্জ শহরের সেওতা কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরআইএসপিআর জানিয়েছে। সমাহিত করার আগে ঢাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সেখানে তার আরেক দফা জানাজা হয়। এর আগে চট্টগ্রামেও তার জানাজা হয়। খবর বিডিনিউজের।

বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকারউজজামান, বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নৌবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে ঢাকা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফিউনারেল প্যারেডে আসিম জাওয়াদের পরিবারের সদস্য এবং সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর তাকে দাফনের জন্য নেওয়া হয় মানিকগঞ্জে। সেখানে শহীদ মিরাজতপন স্টেডিয়ামে বেলা ১২টার দিকে আসিম জাওয়াদের কফিন বহনকারী বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার অবতরণ করে। আসিম জাওয়াদের মাবাবা ও স্ত্রী সন্তানেরাও হেলিকপ্টার থেকে নামেন। স্টেডিয়ামে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আসিম জাওয়াদের মা নীলুফা আক্তার খানম ও স্বজনেরা।

বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে বিধ্বস্ত হয়। নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবেই উড্ডয়ন করেছিল বিমানটি।

দুর্ঘটনার পর বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ প্যারাশুট দিয়ে নদীতে নেমে আসেন। বিমান ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেরা মিলে তাদের উদ্ধার করে। আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত তাকে বিএনএস পতেঙ্গায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আইএসপিআর জানায়, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে দুই বৈমানিক অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

আসিম জাওয়াদের অকাল প্রয়াণে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান।

১৯৯২ সালের ২০ মার্চ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আসিম জাওয়াদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর।

তার বাবা মো. আমান উল্লাহ, মা নীলুফা আক্তার খানম। ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাস করেন আসিম জাওয়াদ। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার পেয়ে জিডি (পি) শাখায় কমিশন পান।

আইএসপিআর জানায়, কমিশন পাওয়ার পর থেকে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আসিম জাওয়াদ। পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিতে মফিজ ট্রফি, বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র পেয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউচ্ছেদের তিন মাসের মধ্যে আবার দোকান
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের তিনটি উপ-আইন চূড়ান্ত করল মন্ত্রণালয়