অসহায়–দুস্থ মানুষের কথা ভেবে তরুণদের এগি আসার আহ্বান জানিয়েছেন ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, মানুষের কথা ভাবতে হবে, তাদের নিয়ে তরুণদের ভাবতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। কবি ও প্রাবন্ধিক মিনার মনসুরের একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের উদ্যোগে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। শুরুতে কবি মিনার মনসুরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. অনুপম সেন বলেন, ছোটবেলা থেকে বিক্ষুব্ধ বিশ্বকে দেখেছি, অত্যাচারের বিশ্বকে দেখেছি, অত্যাচারিত মানুষকে দেখেছি, আজও দেখছি। ১৯৭২ সালের সংবিধান দেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন–বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত, একটি হলো শোষিতের আরেকটি শোষকের। তিনি যে গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন তা হলো শোষিতের গণতন্ত্র, শোষকের নয়। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, প্রত্যেকে তার ধর্ম পালন করবে কিন্তু ধর্মকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করবে না।
তিনি বলেন, মিনার মনসুরের লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি তার লেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নারী ও শিশু হত্যা নিয়ে বারবার লিখেছেন। কিছু মানুষ আছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, এভাবে আপনারা অনেকে দাঁড়িয়েছেন। যুগে যুগে মানুষ দাঁড়ায়, মারাও যায়।
‘আজকের বিশ্ব বঞ্চিতের বিশ্ব। আমরাতো অত্যন্ত সুবিধাভোগী, আরামে থাকি। কিন্তু যখন রাস্তা দিয়ে যাই, দেখি–অনেক মানুষ ফুটপাতে শুয়ে আছে। মিনার মনসুররা একদিন তাদের জন্যই সংগ্রাম করেছেন, এখনো করছে। এসব মানুষের কথা ভাবতে হবে, তাদের নিয়ে তরুণদের ভাবতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও প্রাবন্ধিক মিনার মনসুর সংবর্ধনার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি একুশে পদক পেতে চাইনি, কবি হতে চাইনি, বিপ্লবীও হতে চাইনি; আমাদের চোখের সামনে যে অন্যায় হয়েছিল, শিশু হত্যা হয়েছিল, নারী হত্যা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করেছি মাত্র। এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যিনি প্রতিষ্ঠাতা, যার জন্ম না হলে এই রাষ্ট্রের জন্মই হতো না, সেই মানুষটিকে যখন হত্যা করাই হলো, আমি চেয়েছিলাম তার প্রতিবাদ করতে, প্রতিশোধ নিতে। আমি একুশে পদক পাওয়ার পর যখন জিজ্ঞেস করা হয়–আমার প্রতিক্রিয়া কী? আমি বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে পদকটি দিয়েছিলেন সেটি আসলে আমাকে দেননি, পঁচাত্তরের পরে আমার মতো অখ্যাত, অজ্ঞাত হাজার হাজার তরুণ লড়াই করেছে মাঠে, আমি তাদের পক্ষ থেকে পদকটি গ্রহণ করেছি মাত্র। খোরশেদ আলম সুজন বলেন, পঁচাত্তরের ধ্বংসস্তূপ থেকে কীভাবে আওয়ামী লীগ উঠে এসেছে–আজ যারা রঙিন চশমা চোখে দিয়ে বিভোর জীবন কাটাচ্ছেন, তারা জানেন না, দেখেন না। পৃথিবীতে এমন নেতা নেই, যিনি স্বপ্নের বীজ বপন করে সেই বৃক্ষের ফল জনগণের জন্য দিয়ে গেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্নের বীজ বপন করেছেন এবং সেই বৃক্ষের ফল আমাদের জন্য দিয়ে গেছেন।
নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব শাহরিয়ার খালেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, কোডেকের উপনির্বাহী পরিচালক কমল সেনগুপ্ত, ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তৈয়ব, অধ্যাপক মাইনুল হাসান চৌধুরী, অনুবাদক ও গবেষক আলম খোরশেদ, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, রাশেদ মনোয়ার, এডভোকেট এ টি এম আফতাবউদ্দীন, কবি দিলওয়ার চৌধুরী, কবি ইউসুফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান হারুন, জামশেদুল আলম চৌধুরী, এডভোকেট মুজিবুল হক, সাইফুদ্দিন সাকী, মশিউর রহমান চৌধুরী, যুবনেতা মাহবুবুল আলম সুমন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন, কাজী সিরাজুল ইসলাম, দিলরুবা খানম, মিশফাক রাশেল, মারওয়া আনজুমানে জান্নাত, সৈয়দ হোসেন বাবু। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।