একজন সাইকোপ্যাথিক কিভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়?
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন নামে যে আশ্রম মিল্টন সমাদ্দার গড়ে তুলেছেন, সেখানে আশ্রিত কারো শরীরে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে তিনি নিজেই তা করতেন। কখনো কখনো অসুস্থ ব্যক্তির শরীরের কোনো অংশ কেটেও ফেলতেন মিল্টন।
গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করার ছবি–ভিডিও শেয়ার করে আলোচনায় আসা মিল্টন সমাদ্দারকে ১ মে সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। খবর বিডিনিউজের।
কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের নামে তার অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকলে ফের তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপরই তৎপর হয় পুলিশ। মিল্টনের বিরুদ্ধে আশ্রমের বাসিন্দাদের জাল মৃত্যু সনদ তৈরি, মারধর ও মানবপাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। তিনটি মামলাই তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় তিন দিন রিমান্ডের পর গতকাল মানবপাচারের মামলায় ফের চার দিনের রিমান্ড হয়েছে তার।
প্রথম দফার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টনের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন। মিল্টন সমাদ্দার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যুর যেসব বর্ণনা দিয়েছে, তার প্রতিটির জবাব দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশ্রমে আশ্রয় পাওয়া গরিব, ঠিকানাবিহীন ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার নামে অমানবিক আচরণ করতেন মিল্টন সমাদ্দার। কারো হাতে বা শরীরের কোনো অংশে ঘা হলে বা কেটে যাওয়ার কারণে ইনফেকশন হলে মিল্টন সমাদ্দার ব্লেড বা ধারালো চাকু চালাতেন সেই জায়গায়। কোনো কোনো অংশ কেটেও ফেলতেন। ওইসব ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত ঝরলে মিল্টন সমাদ্দার এক আলাদা অনুভুতি পেতেন।
তার কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ছুরি, ব্লেডসহ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সোয়া কোটি টাকার মতো আছে অথচ তিনি কারো উপযুক্ত চিকিৎসা করাননি। নিজেই অপারেশন থিয়েটারের প্রধান হয়ে ছুরি ব্লেড চালান।
ফেইসবুকে মিল্টনকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে প্রচার করায় ডিবি কর্মকর্তা হারুন প্রশ্ন রাখেন, একজন সাইকোপ্যাথিক মানুষ কিভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়?
হারুন বলেন, কেউ অসুস্থ হলে বিষয়টি হাসপাতালকে অবহিত করা, চিকিৎসককে বা স্থানীয় থানাকে জানানো, এমনকি ঠিকানাবিহীনদের পরিচয় পত্রিকায় প্রচার করা, যাদের স্বজন আছে, তাদেরকে স্বজনকে খবর দেওয়ার মতো কোনো কাজই মিল্টন সমাদ্দার করেননি।
ফেইসবুকে ৯০০ লাশ দাফন করার কথা বলেছেন মিল্টন সমাদ্দার। এখন মিল্টন সমাদ্দার বলছে ১৩৫ থেকে ১৪০ লাশের দাফন করেছে। এসব মৃত্যুর সবগুলোর জবাবদিহি করতে হবে তাকে। মিল্টনের সঙ্গে জড়িত থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা, উৎসাহিত করেছে, ফেইসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর কাজ করেছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মিল্টনের স্ত্রীকে তলব : মিল্টনের স্ত্রী মিঠু হাওলাদারকে দুপুরে ডিবি অফিসে তলব করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে অবস্থানের পর বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। তিনি জানান, তার স্বামীর অপরাধের বিষয়ে তার কাছে ডিবির কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছেন।
মিল্টনের স্ত্রী বলেন, স্বামীর এসব অপরাধের বিষয়ে কিছু জানা নেই এবং তার কোনো সম্পর্কও ছিল না বলে তিনি জানিয়েছেন।