ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১৪ বছর পর শুরু হচ্ছে নগর ভবনের নির্মাণকাজ। আজ সোমবার নগরের আন্দরকিল্লায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এই নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর আগে ২০১০ সালের ১১ মার্চ নগর ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) দুজন মেয়র এবং একজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করলেও নগর ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। অবশ্য এ সময়ে মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ও আ জ ম নাছির উদ্দীন নগর ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেন। তবে অর্থ সংকট, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতায় সেই উদ্যোগ থমকে ছিল। বর্তমান মেয়র চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করছেন।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩৮ হাজার ৪৯০ বর্গফুট বা ৫৩ দশমিক ৪৫ কাঠা জায়গায় নগর ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রণয়ন নামে একটি কনসালটেন্ট ফার্ম এর নকশা করে। নকশা অনুযায়ী এটি হবে ‘আইকনিক’ ভবন। তিনটি বেইসমেন্ট পুরো নগর ভবন হবে ২১ তলা। ভবনের উপরে থাকবে সিটি ক্লক। ভবনের তিন পাশে সাজানো বাগান থাকবে। নির্মাণ করা হবে ফোয়ারা। ৮ম থেকে ২১ তলা সিটি কর্পোরেশনের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভবনের কয়েকটি ফ্লোর বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া হবে। থাকবে মাল্টিপারপাস হল, কনফারেন্স হল ও ব্যাংকুয়েট হল। তবে পুরো নগর ভবন নির্মাণ করা হবে ধাপে ধাপে। শুরুতে বেইসমেন্টসহ তিনটি ফ্লোর (অবকাঠামোগত) করা হবে। এজন্য ২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স জেবি মজিদ অ্যান্ড সন্সকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে পুরাতন নগর ভবন ভাঙার জন্য নিলামে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়ে সম্প্রতি তা শেষ করে জাবেদ এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের বৃহৎ সিটি কর্পোরেশনগুলোর একটি। এখানে নগর ভবন থাকবে না তা হয় না। তাই নিজস্ব ফান্ডে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। আশা করছি এক বছরের মধ্যে নগর ভবন দৃশ্যমান হবে। যেহেতু মেয়র একসঙ্গে ৩০ কোটি টাকার বেশি দরপত্র আহ্বান করতে পারে না, তাই পুরো নগর ভবনের কাজ ধাপে ধাপে শেষ করা হবে।
তিনি বলেন, নগর ভবন নান্দনিক ও আইকনিক। পুরনো ভবনের পেছনে যে জায়গা রয়েছে সেটাও আমরা নিয়ে ফেলেছি। এতে জায়গার পরিমাণ বেড়েছে। আশা করছি খুব সুন্দর একটি ভবন হবে।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা আজাদীকে বলেন, নিয়োজিত ঠিকাদারকে দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় ধাপে ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা আছে।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবন নির্মাণে ২০২ কোটি টাকায় চসিকের গৃহীত একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র থাকাকালে প্রকল্পটি প্রথম গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালে ৭৪ কোটি টাকায় ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ২০১৭ সালে ডিপিপিটি সংশোধন করা হয় ১২০ কোটি টাকায়।
এরপর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আবারও সংশোধন করে ২০২ কোটি ২৪ লাখ টাকায় ২৩ তলা নগর ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি সে প্রকল্পও। যা সংশোধন করে ২২৯ কোটি টাকা করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে মূল প্রকল্প থেকে তিনটি ফ্লোর কমিয়ে ২০ তলা নগর ভবনের ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ২০২ কোটি। বর্তমানে এ প্রকল্পটিই একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এর আগে তখন ভবন নির্মাণে আ জ ম নাছির জনতা ব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা ঋণও চান। এতে আপত্তি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবন নির্মাণে প্রথম উদ্যোগটা নিয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া শুরু হয়েছিল এ নির্মাণকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ জে কনস্ট্রাকশন নগর ভবনের প্রথম ছয়তলা নির্মাণের কাজ পেয়েছিল ওই সময়। ওই সময় চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে নগর ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
মনজুর আলম মেয়র থাকাকালে ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর ৪৯ কোটি টাকায় ৬২ শতক ভূমিতে ২০ তলা নগর ভবন নির্মাণে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। তবে নিজস্ব অর্থে চসিককে নগর ভবন নির্মাণ করতে বলা হয়। এরপর বিভিন্ন জটিলতায় প্রায় তিন বছর কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালে পুনরায় কাজ শুরু হয়। কিছুদিন যেতেই অর্থাভাবে আবারও কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, আন্দরকিল্লা মোড়ে ১৮৬৪–৬৫ সালের দিকে নির্মিত ভবন ছিল। প্রথমে ওই ভবন থেকে চসিকের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় ২০০৯ সালে ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা ওই ভবনটির পাশে ষাটের দশকের শেষে তিনতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে ছয় তলায় উন্নীত করা হয়। এ ভবনটি চসিকের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হতো। ২০১৯ সালের ২০ জুন তা টাইগারপাসের অস্থায়ী কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। একইসঙ্গে সম্প্রতি পুরনো ভবনটি ভাঙার কাজ শেষ হয়।