খালেদ চৌধুরী (১৯১৯–২০১৩)। তিনি একাধারে মঞ্চপরিকল্পক, প্রচ্ছদশিল্পী, সংগীতজ্ঞ, লোকশিল্প সংগ্রাহক ও লেখক। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জেলার করিমগঞ্জে, জন্মগ্রহণ করেন। দাদু গুরুসদয় দত্ত নাম রেখেছিলেন চিরকুমার। কিন্তু তাঁর পিতা পরে নামটি চিররঞ্জন দত্ত চৌধুরীতে পরিবর্তিত করেন। তারপর বহু অভিজ্ঞতা পেরিয়ে নিজেই নিজের নাম রাখলেন খালেদ চৌধুরী। যদিও তিনি তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করেননি। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র সতেরো বছর বয়সে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় খালেদ বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা এসে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। অল্প বয়স থেকেই ছবি আঁকার প্রবণতা ছিল তাঁর। পঞ্চাশের মন্বন্তর তখন, কিশোর খালেদ ছবি আঁকছেন দুর্ভিক্ষ নিয়ে। পার্টি তাঁকে দিয়ে প্রথমদিকে পোস্টার আঁকাতে শুরু করে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের উৎসাহে তিনি তাঁদের গণসংগীতের দলে যোগ দেন। কলকাতায় কিছুদিন থেকে আবার সিলেটে ফিরে গিয়েছিলেন। দু–বছর পর ছবি আঁকার অভীপ্সা নিয়ে আবার তাঁর কলকাতায় আসা। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে শহীদের ডাক নামক একটি ছায়া থিয়েটারে জড়িত করা হয়েছিল। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বহরূপীতে যোগদান করেছিলেন। তাঁল কর্মগুণে তিনি হয়ে ওঠেন মঞ্চস্থাপত্যে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তাঁর পরিচালিত মঞ্চ নাটকগুলো হলো: পুতুলখেলা, গুড়িয়া ঘর, শুতুরমুর্গ, এবং ইন্দ্রজিৎ, আধে আধুরে, ডাকঘর, কালের যাত্রা, পাগলা ঘোড়া, আকরিক, তখন বিকেল, জন্মদিন, দুই তরঙ্গ, সুন্দর, কর্ণাবতী, চিলেকোঠার সেপাই, অন্তর যাত্রা প্রভৃতি। ভারতের নাট্য জগতে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্যে ২০১২ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ–এ ভূষিত করা হয়। মঞ্চস্থাপত্যের বাইরেও তাঁর পদচারণা ছিল নৃত্য, সংগীত, গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা অলংকরণ, এমনকি অভিনেতার ভূমিকাতেও। তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।