গত কিছুদিন ধরে বেশ গরম পড়ছে সারা দেশে। চট্টগ্রামে যেন গরমের মাত্রাটা আরো বেশি। আবহাওয়া দপ্তর বারবার সতর্ক করছে মানষুকে। এরই মধ্যে সারা দেশে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকালও ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামে। সাথে ছিল লু হাওয়া। তাই শংকা ছিল জব্বারের বলী খেলায় দর্শক হবে কিনা। কারন সকাল থেকেই গরমের মাত্রাটা ছিল বেশি। কিন্তু বিকেল গড়াতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো লালদীঘি মাঠ। বিকেল সাড়ে চারটার কিছু আগে শুরু হয় বলী খেলা। আর তখন যেন দর্শকের ঢেউ খেলতে থাকে লালদীঘি মাঠে। সাম্প্রতিক সময়ে এত দর্শক আর দেখা যায়নি জব্বারের বলী খেলায়। শুধু দর্শক নয় এবারের বলীর সংখ্যাও ছিল বেশি। তবে আসল লড়াইটা জমেনি। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে দর্শকরা এলেও তাদের মন ভলাতে পারেনি বলীরা। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলী এবং রানার্স আপ জীবন বলীতো অংশই নিলেননা। বাকি যারা খেলেছেন তাদের খেলায়ও মন ভরেনি দর্শকরদের। ফলে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মাঠে আসাট যেন সার্থক হলোনা।
১২ বৈশাখ জব্বারের বলী খেলা যেন এখন চট্টগ্রামের মানুষের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। জব্বারের বলী খেলা আর বৈশাখী মেলার জণ্য যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে চট্টগ্রামের মানুষ। আর এই সংস্কৃতির সবচাইতে বড় আকর্ষণ বলী খেলা। জব্বারের বলী খেলার ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় মুলত দক্ষিন চট্টগ্রাম এবং কঙবাজার জেলার বলীরা সবচাইতে বেশি রাজত্ব করেছে এখানে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন অণ্য জেলার বলীরা রাজত্ব দখল করছে। এখন কুমিল্লার বলীদের রাজত্ব চলছে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ণ ছিল কুমিল্লার শাহজালাল বলী। আগের আসরে তিনি ছিলেন রানার আপ। তার আগের আসরে ছিলেন চ্যাম্পিয়ন। আর এবারে আবারো কুমিল্লার বলী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই কুমিল্লার দর্শক ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে তাদের মাঠে আসাটা স্বার্থক হয়েছে। কারন তাদের বলী যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
দুপুরের পর থেকে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে লালদীঘির মাঠের দিকে। চারটার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মাঠে প্রবেশের পথ। কিন্তু দর্শকদের আসা যেন থামছিলনা। এক সময় মাঠের চার পাশের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। মাঠের দক্ষিণ পাশের প্রধান ফটকটিও এক সময় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল দর্শকের চাপে। মাঠের ভেতরে এমনকি ছয় দফা আন্দোলনের মঞ্চ যেখানে জব্বারের বলী খেলার পুরষ্কার বিতরণের জণ্য মঞ্চ তৈরি করা হয় সেখানেও লোকে লোকারন্য। কোথাও যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। পুলিশ লাইনের পাহাড়ের উপরেও উঠে যায় দর্শকরা। প্রচন্ড গরম যেন তাদের দমাতে পারছিলনা। প্রিয় বলীকে সমর্থন যোগাতে গলা ফাটিয়েছে সমান তালে। তবে হতাশ হতে হয়েছে তাদের। কারন খেলাটা খুব একটা জমেনি। লালদীঘি মাঠের ধুলা বালিতে যেন একাকার দর্শকরা। একদিকে উপরে সুর্যের তাপের গরম আর অণ্য দিকে নিচের মাঠি থেকে উঠে আসা গরমে যেন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দর্শকদের। কিন্তু একটুও নড়ার কোন সুযোগ নেই। যে যেখানে দাঁড়িয়েছিল ঠিক সেখানেই ঠাই দাড়িয়ে থেকেছে। যতক্ষণ না খেলা শেষ হয়েছে। তবে এবারের জব্বারের বলী খেলায় রেকর্ড সংখ্যক দর্শক এসেঠে মাঠে খেলা দেখতে। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এমনিতেই গত দুই দিন ধরে চলে আসা বৈশাখী মেলাও চলছে দর্শনার্থীদের ভীড়। দিন কিংবা রাত মানুষে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে মেলা। তবে বলী খেলায় এত দর্শকের উপস্থিতি ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। শহরের সংস্কৃতিতে জব্বারের বলী খেলা যেন ১২ বৈশাখ একদিন গ্রামীণ পরিবেশে রূপ নেয়। আর সে পরিবেশে গ্রাম আর শহরে র মানুষ মিলে মিশে যেন একাকার হয়ে যায়। গতকাল যেমনটি দর্শকের ঢেউয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল লালদীঘি ময়দান।