যার তুলির ছোঁয়ায় কত হাজার মুখ যে ভুমিষ্ঠ হয়েছে তার সঠিক হিসাব রাখেনি কেউ। ক্যানভাসে জন্ম দিয়েছেন তিনি নিজেরও। তিনি হলেন ডাচ চিত্রকলার স্বর্ণযুগের বিখ্যাত শিল্পী “রেমব্রান্ট”। পুরো নাম হারমেনজ ভান রাইন রেমব্রান্ট। সারা বিশ্বে যিনি বন্দিত শ্রেষ্ঠতম প্রতিকৃতি শিল্পী হিসেবে। এই বিখ্যাত শিল্পী ১৬০৬ সালে নেদারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকাল থেকে তার প্রতিভার সন্ধান পাওয়া যায় । গুণমানে ও সংখ্যাধিকে তার আঁকা প্রতিকৃতি চিত্রসম্ভারকে অতিক্রম করতে পারেনি কেউ। তিনি বিশ্বনন্দিত ডাচ চিত্রকর ও এচিং শিল্পী, ইউরোপিয়ান শিল্পকলার ইতিহাসে অন্যতম মহৎ চিত্রকর ও ছাপচিত্রী। তিনি ডাচ স্বর্ণযুগ ও বারোক শিল্পযুগের প্রতিভাবান শিল্পী।
প্রতিকৃতিশিল্পী হিসেবে সাফল্য অর্জনের পরবর্তী বছরগুলো ছিল বড় শোকাবহ এবং অর্থসংকটময়। প্রত্যেকের ঝীবনের সাফল্যের সাথে সাথে অর্থের সিড়িটাও উর্ধদিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু এ শিল্পীর জীবনে তা ছিল তার ঠিক উল্টো। তিনি যখন স্বীকৃতি পান তখনই তার জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। তাই বলে তিনি থেমে থাকেননি। তিনি মনোবলকে শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে প্রায় বিশ বছর ধরে বরেণ্য ডাচ চিত্রকরদের শিল্পকলায় দীক্ষা দান, সমসাময়িক শিল্পীদের প্রতিকৃতি ও বাইবেল থেকে নেয়া কল্পচিত্রের তুলি প্রস্ফুুটনের মধ্যে দিয়ে পরিব্যাপ্ত করেছেন নিজেকে।
তার আত্মপ্রকৃতিগুলো যেন এক অনবদ্য আত্মচরিত, যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন একনিষ্ঠভাবে। ডায়েরীতে, চিঠিতে, স্কেচখাতার ছেঁড়া পাতায় কোথাও তিনি নেই লিখিত অক্ষরে। সমগ্র জীবনে মোট কতগুলি আত্মপ্রতিকৃতি একেঁছিলেন তিনি? সংখ্যাটি আজও স্থির নিশ্চিত করে বলা যায়নি। তবে তা নব্বই এর কাছাকাছি তো বটেই। তার মধ্যে ষাটটি তেলরঙে আঁকা, আর বাকীগুলো কাগজের বুকে আঁকা ড্রয়িং অথবা ধাতবপাতে করা এচিং। প্রথমবার যখন নিজের মুখ এঁকেছিলেন তখন তার বয়স বাইশ, আর শেষ মুখটি একেঁছেন মৃত্যুর সামান্য কিছুদিন আগে। মনে হয় এই অবিরাম আত্ম–অবলোকনের মাঝে রেমব্রান্ট খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন সময়কে, পরিপার্শ এবং কি জান হয়ত বিশ্বকেও। চিত্রকলাও ছাপচিত্র উভয় মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তার শিল্পদক্ষতা। মানুষের প্রতি ছিল তার পরম ভালোবাসার দরদ। তার দরদী মন তাকে নিয়ে গিয়েছে “সভ্যতার অন্যতম দেবদূত” খেতাবে। একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, ছাপচিত্রশিল্পী, নকশাকার, প্রতিভাবান এবং দেনাদার এতসব পরিচয় থাকার পরও যদি কেউ নতুন করে জিজ্ঞাসা করে কে এই রেমব্রান্ট? তাহলে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। এই শিল্প শ্রষ্টার জীবন ও কর্মকে ব্যাখ্যা করা দুরুহ ব্যাপার। তিনি জীবদ্দশাতেই সমাদৃত হয়েছেন খ্যাতিমান হিসেবে ঠিক তেমনি সমালোচিত হয়েছেন বড্ড সেকেলে হিসেবে। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে “দানেই” “জ্যাকব দ্যা ঘেইনত” দ্য অ্যানাটমি লেসন অব ডাঃ নিকোলাস তুল্প” “বেলশহ্যাজারস্ ফিস্ট” “দ্যা লাইট ওয়াচ্” “মিউজিক্যাল অ্যালেগরি” “প্যাট্টিয়ট অফ এ ফ্যামিলি ” অন্যতম। এই মহান চিত্রকর মাত্র ৬৪ বছর বেচেছিলেন। অথাৎ ১৬৬৯ খিষ্ট্রাব্দে এই পৃথিবী খেকে বিদয় নেন। তার কর্মের মাধ্যমে তিনি বেচে থাকবেন অনন্তকাল ।