টোল নিয়েই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করতে চায় সিডিএ। আগামী মাসের মধ্যে অস্থায়ী দুটি টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে সিডিএ বিভিন্ন হারের টোল আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত টোলের হার নির্ধারণের বিষয়টি অনুমোদন হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর টোল নির্ধারিত হলে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পৃথক পয়েন্টের জন্য পৃথক হারে টোল আদায় করা হবে। তবে সবগুলো র্যাম্প নির্মাণের পর টোল আদায়ের পুরো প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে একাধিক র্যাম্প নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টাইগারপাসে দ্বিতল সড়ক এবং গাছ রক্ষা করে নতুন অ্যালাইমেন্টে র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২শ ৯৮ কোটি টাকা। বর্তমানে লাইটিং, সিসিটিভি, রিটেইনিং ওয়ালসহ টুকটাক কিছু কাজ চলছে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ১৫টি র্যাম্প থাকছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার মূল অবকাঠামোর সাথে র্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার।
টাইগারপাসের আমবাগান সড়কে নামার র্যাম্প নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। লালখান বাজার থেকে ওঠার র্যাম্পের কাজও শেষ পর্যায়ে। পতেঙ্গা অংশে নামার কাজ শেষ। তবে লাইটিং ও সিসিটিভিসহ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজগুলো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে ইচ্ছে করলে টাইগারপাস বা লালখান বাজার থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে দিনের বেলা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে শেখ মুজিব রোডে যানবাহনের চাপ কমে যাবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে সিডিএ টোল আদায়ের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল শুরু করতে চায়। সিডিএর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একবার টোল ছাড়া গাড়ি চলাচল শুরু হলে পরে টোল নেওয়া কঠিন হবে। শুরুতে শুধু লালখান বাজার বা টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত টোল নেবে সিডিএ। পরে সবগুলো র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলে সাড়ে এক্সপ্রেসওয়ের ৬টি পয়েন্টে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে। দূরত্ব এবং যানবাহন ভেদে পৃথক হারে টোল আদায় করা হবে। নগদ টাকা, ব্যাংক কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আপাতত পতেঙ্গা প্রান্তে দুটি অস্থায়ী টোল প্লাজা নির্মাণ করে আগামী মাসের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সিডিএ।
প্রকল্প পরিচালক এবং সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের মূল অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ। এখন লাইটিং এবং সেফটি ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এগুলো চীন ও ভারত থেকে আমদানি করে আনা হচ্ছে। স্পিডব্রেকারসহ কিছু সেফটি ইকুইপমেন্ট স্থাপন না করা পর্যন্ত যান চলাচল শুরু করা ঠিক হবে না।
সিডিএর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল এবং সিএনজি টেক্সি চলাচল করতে পারবে। যানবাহন ভেদে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর টোল আদায়ের ব্যাপারটি নির্ধারিত হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার সময় টোল আদায়ের ব্যাপারটি উল্লেখ ছিল বলে সিডিএর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সিডিএর প্রস্তাবিত টোলে মোটরসাইকেল দূরত্ব ভেদে ১০ ও ১৫ টাকা, সিএনজি টেক্সি ২০ ও ৩০ টাকা, প্রাইভেটকার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বড় বাস ২৮০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার ট্রাক ২০০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলরের জন্য ৪৫০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। টোলের ব্যাপারটি চূড়ান্ত এবং পতেঙ্গা প্রান্তের নির্মাণাধীন অস্থায়ী টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতে পারব। সিডিএ এর আগে কোনো ফ্লাইওভার বা সড়ক থেকে টোল না নিলেও এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল নেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, টোল দিয়ে পারতপক্ষে কেউ ফ্লাইওভারে উঠবে না। এতে করে এই প্রকল্পটির সুফল থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হবে। অপরদিকে টোল আদায় পর্যাপ্ত না হলে অবকাঠামোগত যে খরচ তার পরিচালন ব্যয় সিডিএর জন্য গলার কাঁটা হয়ে দেখা দেবে।
অপর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টোল দিতে হবে। উন্নত অনুন্নত অনেক দেশে ফ্লাইওভার তো দূরের কথা, ভালো রাস্তায় যাতায়াত করতেও টোল পরিশোধ করতে হয়। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, এমনকি ভারতের মতো দেশেও রাস্তার জন্য প্রচুর টোল নেওয়া হয়।
নতুন অ্যালাইমেন্টে টাইগারপাস র্যাম্প : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ১৫টি র্যাম্প থাকবে। টাইগারপাসে দ্বিতল সড়ক থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার র্যাম্প নির্মাণ নিয়ে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে সিডিএ। উক্ত সড়কের গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে চট্টগ্রামে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে সিডিএ নতুন অ্যালাইমেন্টে এখানে র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এজন্য চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে বৈঠক করে সিডিএ নতুন অ্যালাইমেন্ট ঠিক করবে; যাতে সড়ক ও গাছের কোনো ক্ষতি না হয়। এই র্যাম্প নির্মাণের জন্য একটি গাছও কাটা হবে না বলে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে জানিয়েছেন। সবগুলো র্যাম্প নির্মাণ সম্পন্ন করে এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হতে আরো বছর দুয়েক সময় লাগবে বলে জানা গেছে।