মোহাম্মদ মোদাব্বের(১৯০৮–১৯৮৪)। সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক। তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার হাড়োয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে স্যার আর.এন. মুখার্জী বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। দেশ বিভাগ পূর্ব ব্রিটিশ ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিকতা জগতে উল্লেখযোগ্য নাম মোহাম্মদ মোদাব্বের। শিশু–কিশোর সংগঠনের অগ্রপথিক, শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোহাম্মদ মোদাব্বের ছিলেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুকুলের সম্পাদক মণ্ডলির সদস্য। তিনি মৌলবী মুজিবর রহমানের ‘দি মুসলমান’ (১৯২৮) পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীকালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘দি ফরর্য়োড’ (১৯৩৩) পত্রিকায় যোগদান করেন। এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন জনাব আবুল মনসুর আহম্মেদ ও জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন জনাব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক মোহাম্মাদীতে যোগদান করেন। এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। ‘বাগবান’ ছদ্মনামে এ পত্রিকার ছোটদের পাতা ‘মুকুলের মহফিল’ সম্পাদনা করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯–এর আগস্ট মাসে কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন এবং স্থায়ি বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেহাদে যোগদান করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট তিনি ঢাকায় নিজের সম্পাদনায় পাকিস্তান নামে একটি অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিলো। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে দৈনিক মিল্লাত প্রকাশিত হলে তিনি তার প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। এছাড়া ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান রেডক্রস পরিচালিত মাসিক জুনিয়র রেডক্রস পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। তাঁর শিশুসাহিত্য গ্রন্থ হচ্ছে– হীরের ফুল(১৯৩০), তাকডুমাডুম(১৯৩০), মিসেস লতা সান্যাল ও আরও অনেকে (১৯৩৩), কিসসা শুনো (১৯৫০), গল্প শুনো (১৩৭১ বা), ডানপিটের দল(১৯৬২)। তাছাড়াও তাঁর উল্ল্যেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে– আমার প্রথম লেখা (১৯৫৭), সাংবাদিকের রোজনামচা (১৯৭৭), ইতিহাস কথা কয় (১৯৮১), নজরুল ইসলাম (১৯৮২)। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন এবং সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।