চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়কের ফটিকছড়ি অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং আহত হয়ে হাত–পা ভাঙছে কিংবা পঙ্গু হয়ে ঘরবন্দি হচ্ছে। এজন্য জনসাধারণ সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) না থাকা, অদক্ষ, অশিক্ষিত চালক ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বেপরোয়া গতিকে এই সড়কে দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া এ সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ কেউ নিচ্ছে না বলেও মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল বিকালে সড়কটির নাজিরহাট পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের মধ্য দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ৩ জন একটি মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়ক পার হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পেছন থেকে এসে দ্রুতগতির একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় আব্দুল্লাহ (১৭) এবং মো. মোস্তাকিন (১৩) নামে ২ জন হাফেজের মৃত্যু হয়। এর আগে ২ এপ্রিল রাতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে ইফতার দিয়ে ফেরার পথে হাটহাজারীর নয়াহাট এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় ফটিকছড়ির দুই মোটরবাইক আরোহী যুবকের মৃত্যু হয়। ৭ এপ্রিল ভূজপুরে সিএনজি টেত্মি ও নছিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ সন্তানের জননী গৃহবধূ ইছমু আক্তার (৩৫) ও বাবুনগর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাফেজ মো. শাকিল (২০) মারা যান। গত বছরের ৭ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর চারিয়া ইজতেমা মাঠের সামনে দুর্ঘটনায় বাস–টেঙি মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে এক পরিবারের ৫ জনসহ ৭ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হন। তারা সবাই ফটিকছড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। জানা যায়, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়কের হাটহাজারী থেকে ফটিকছড়ি অংশ প্রায় দ্বিগুণ প্রশস্ত করা হয়। সড়কটি প্রশস্ত ছিল ১৮ ফুট। সড়কটিকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হয়। সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে সম্প্রসারিত অংশে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে নাজিরহাট নতুন রাস্তার মাথা, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ মোড়, এবিসি মোড়, কুম্ভারপাড়, বারৈয়ারহাট মোড়, আন্ডা মার্কেট (খাজা গাউসিয়া মার্কেট) মোড়, ১ নং রোড, উপজেলা ফায়ার স্টেশন সংলগ্ন সড়ক এবং পেলাগাজি মোড় এলাকার আশপাশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে।
মোহাম্মদ সেলিম নামে এক টেঙি চালক বলেন, চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়কে ৮ বছর ধরে গাড়ি চালাই। আগে রোড ছোট ছিল, জ্যাম ছিল বেশি। কিন্তু এখন রোড বড় হওয়ায় জ্যাম কম থাকলেও যার যেমন ইচ্ছা গাড়ি চালায়। এতে করে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তার মতে, রাস্তার মাঝে ডিভাইডার থাকলে দুর্ঘটনা কম হতো।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, সড়কে সব ধরনের যানবাহন যে যার মতো চলছে। একটি গাড়ি অন্য গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে অন্য সাইটে চলে যাচ্ছে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। আমরা বারবার দাবি রেখেছি, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হোক।
নাজিরহাট হাইওয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার মো. আনিসুর রহমান বলেন, অদক্ষ ড্রাইভিং, গাড়ি চালানোর সময় অমনোযোগী এবং গাড়ির অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলোর জন্য আমরা নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। বিশেষ করে বাইকের হেলমেট না থাকা, গাড়ির কাগজপত্র না থাকা এবং গাড়ির অতিরিক্ত স্পিডের কারণে গত কয়েকদিনে ৫টি বাসসহ ১৫টির অধিক যানবাহনকে মামলা দেওয়া হয়েছে। ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র ইসমাইল হোসেন বলেন, সড়কটি হওয়া উচিত ছিল ৪ লেনের। ডাবল সড়ক করে মাঝখানে ডিভাইডার হলে এসব দুর্ঘটনা হতো না। সড়কে ডিভাইডার না থাকায় যার যেমন ইচ্ছা গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন মিটিংয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছি। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে আমি সড়ক বিভাগের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, এ সড়কটি জাতীয়ভাবে একটি আঞ্চলিক সড়ক। এটি যেহেতু একটি জেলাকে সংযুক্ত করেছে, সেক্ষেত্রে এ সড়কের ক্যাটাগরি ২ লেনের। এটাকে ৪ লেন করার সুযোগ নেই। ২ লেনের সড়কে ডিভাইডার দেওয়ারও সুযোগ থাকে না।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনাগুলো মূলত অদক্ষ চালক এবং যত্রতত্র গাড়ি চালানোর জন্য হচ্ছে। এজন্য আমরা সামাজিক ক্যাম্পেইন করার চিন্তা করছি। সাথে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। এর অধীনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়।