বছরের পর বছর বোরো মৌসুমে চাষাবাদ হয় না রাঙ্গুনিয়ার বেশ কিছু জমিতে। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং বিলের অন্তত তিনশ একর কৃষি জমি গত পাঁচ বছর ধরে বোরো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে রয়েছে। একইভাবে বেতাগী ইউনিয়নের চম্পাতলী এলাকায় প্রায় আড়াইশো একর কৃষি জমি এবং পোমরা ইউনিয়নের উত্তর পোমরা এলাকায় প্রায় দুইশো একর কৃষি জমি সেচ সংকটে অনাবাদি রয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় গেল আমন মৌসুমে যে পরিমাণ চাষাবাদ হয়েছিলো, বোরো মৌসুমে এসে সেচ সংকটে চাষ হয়েছে তার অর্ধেক। খাল খননসহ পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে আবাদের আওতায় আসবে এসব কৃষি জমি। এতে কৃষিতে উৎপাদন বাড়বে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এই উপজেলা।
সরেজমিনে পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিলগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুলকুরমাই খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালটিতে পানি নেই। পানি না থাকায় চাষাবাদের জন্য থাকা একটি স্কিম (সেচযন্ত্র) ঘর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। রোয়াজারহাট খালের প্রবেশ মুখেই স্লুইচ গেট দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে ইছামতী নদী থেকে কুলকুরমাই খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে বোরো মৌসুমে অনাবাদি থাকা এসব বিলকে আবাদের আওতায় আনতে জরুরি ভিত্তিতে খননের আবেদন করলেও তা আলোর মুখ দেখছে না গত কয়েক বছরেও। জরুরি ভিত্তিতে খালের খননসহ সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরাও।
অন্যদিকে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চম্পাতলি এলাকায় রয়েছে অন্তত ৬০০ কানি বা ২৪০ একর কৃষি জমি। এসব কৃষি জমিতেও বছরের পর বছর বোরো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে থাকে। আবদুল কাদের (৫৫) নামে একজন কৃষক বলেন, ১০/১২ বছর আগে স্কিমের সাহায্যে কর্ণফুলী থেকে পানি এনে এই এলাকার কৃষকরা সেচ দিতো। তবে এখন তা বন্ধ, বৃষ্টি ছাড়া চাষাবাদ করা যায় না বলে বছরে এক মৌসুমে চাষাবাদ হয় এবং সারাবছর খালি পড়ে থাকে বিলগুলো।
উপজেলার উত্তর পোমরা এলাকায় সড়ক ধরে এগুতেই দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ কৃষি জমি খালি পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে মালিরহাট বার আউলিয়া স্লুইস গেটের সাহায্যে কিছু জমি চাষাবাদ হলেও অধিকাংশই অনাবাদি পড়ে আছে। অথচ কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত গোচরা খালে স্লুইস গেট নির্মাণসহ প্রয়োজনী উদ্যোগ নিলেই আবাদের আওতায় আসবে প্রায় দুইশো একর কৃষি জমি।
উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান তালুকদার জানান, আমন মৌসুমের তুলনায় বোরো মৌসুমে প্রায় অর্ধেক জমি কম চাষাবাদ হয়। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির বিশেষ সহায়তায় বিএডিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বেতাগী, পারুয়া, সরফভাটায় বিভিন্ন সৌর সেচ প্রকল্প ও বারিড সেচ নালা স্থাপন করায় অনাবাদি অনেক জমি এবার আবাদের আওতায় আসছে। তারপরও উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ইউনিয়নের অধিকাংশ জমি বোরো মৌসুমে আবাদ হয় না। তাই এসব জমিকে আবাদের আওতায় আনতে পুরো উপজেলার কৃষি জমিগুলো নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি থাকা অনেক কৃষি জমিগুলোকে পরিকল্পিত আধুনিক সেচ সুবিধার আওতায় এনে আবাদ করা হচ্ছে। সেচ সুবিধার আওতায় আসায় এখন অনেক কৃষি জমিতে বছরে তিন মৌসুমে আবাদ হচ্ছে। সেচ সুবিধার আওতায় আনার কাজটা বিএডিসি কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে করা হয়। রাঙ্গুনিয়ার শতভাগ কৃষি জমিকে আধুনিক সেচ সুবিধার আওতায় আনতে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি।