নগরের জিইসি মোড় গরিব উল্লাহ মাজার সংলগ্ন বাস কাউন্টার। গতকাল সকাল ১০টা। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন মো. আরমান। আলাপকালে আজাদীকে জানান, তিনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী পদে কর্মরত। গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। কর্মসূত্রে ৮ বছর ধরে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বছরে এক–দুইবার বাড়ি যাওয়া হয়। এবার ঈদের ছুটি শুরু হবে আরো কয়েকদিন পর, বুধবার থেকে। সেদিন তিনি বাড়ি যাবেন। তবে ওইদিন চাপ থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাই তাদের বাসে তুলে দিতে এসেছেন। অবশ্য পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ঢাকা যাবেন। সেখানে তার বড় ভাইয়ের বাসায় এক রাত থেকে আজ রোববার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তারা। কথা হয় আরমানের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাজনীনের সঙ্গে। সে বলে, অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। ভালো লাগছে। দাদি, চাচা–চাচি এবং কাজিনরা সবাই মিলে ঈদ করব। অনেক মজা হবে। সবার সঙ্গে ঈদ না করলে ঈদের মতো লাগে না।
নাজনীনের কথা থেকেই স্পষ্ট, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। তবে স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে না পারলে সে আনন্দে পূর্ণতা আসে না। তাই ঈদের আনন্দ উদযাপনে সবাই ছুটছেন বাড়ি। অবশ্য যারা চাকরি করেন তাদের কেউ কেউ সোমবার এবং কেউ কেউ মঙ্গলবার অফিস করবেন। তাই তারা ফিরবেন আরো পরে। তবে এদের বেশিরভাগই শেষ মুহূর্তের ভিড় এড়াতে পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন, যা শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকে। এদিন ট্রেনের অগ্রিম টিকেটে ঘরমুখো যাত্রীদের প্রথম যাত্রা ছিল। সেটা অব্যাহত আছে। ফলে ধীরে ধীরে ফাঁকা হচ্ছে নগর। সরব হচ্ছে গ্রাম। ঘরমুখো লোকজন বলছেন, উপলক্ষ ঈদ তো আছেই। সাথে আছে নাড়ির টান। দুয়ের সম্মিলনে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে হৃদয়। তাই শহরে আর মন বসছে না।
এবার ঈদের ছুটি শুরু হবে আগামী বুধবার থেকে। রোববার পর্যন্ত টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকবে সরকারি অফিস–আদালত। গত দুই দুদিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। আজ শবে কদরের ছুটি। অনেকে তাই আগামীকাল সোমবার ও পরশু মঙ্গলবার ছুটি নিয়েছেন কর্মস্থল থেকে।
দীর্ঘ এ ছুটি পেয়ে উতলা হয়ে উঠেছেন ইট–কংক্রিটের শহরে সচ্ছল জীবনের স্বপ্নে বন্দি থাকা লোকগুলো। সবুজ গ্রামের উদার প্রকৃতি এবং বিশুদ্ধ বাতাসের হাতছানি উতলা হৃদয়কে যেন আরো বেশি উস্কে দিয়েছে লম্বা ছুটি। তাই আপনজনের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে রীতিমতো পণ করেছেন তারা। ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। যারা ছুটির ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের। ছুটি পেলে তারাও ছুটবেন।
গতকাল দুপুরে নতুন ব্রিজ এলাকায় একটি পরিবহন সার্ভিসের টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হয় কায়সারের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি কঙবাজারের উখিয়া। বাড়ি থেকে এসেছেন প্রায় ছয় মাস আগে। মঙ্গলবার বিকালে তিনি বাড়ি যাবেন। আজ স্ত্রী, সন্তান ও ভাইকে বাসে তুলে দিতে এসেছেন।
গতকাল বিকাল পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাড়ি চাঁদপুর। ভার্সিটি বন্ধ। কিন্তু টিউশনি থাকায় এতদিন বাড়ি যেতে পারিনি। ঈদের আগে গতকাল (শুক্রবার) টিউশনির শেষ দিন ছিল। তাই আজ (শনিবার) বাড়ি যাচ্ছি।