বর্ণাঢ্য র্যালি, চার দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন আর নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি নৃ–গোষ্ঠীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু উপলক্ষে চার দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়।
এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে পাহাড়ে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের এই বর্ণিল উৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, সংসদ সদস্য জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ প্রমুখ। বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠানস্থলে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের যৌথ নৃত্য পরিবেশিত হয়। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে, বিকেল চারটায় রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে জেলা ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে চত্বরে এসে মিলিত হয়। চার দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আগামী ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায়। মেলায় পোশাক, খাবার, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় অর্ধ–শতাধিক স্টল বসেছে। চারদিনের এই মেলায় ঘিলাখেলা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক মঞ্চায়ন, পাচন রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে।
মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলায় বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু মেলার মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে অন্যান্য বছর উদ্বোধনী দিনে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের নিয়ে ডিসপ্লে অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও এবার ডিসপ্লেতে কেবল একটি যৌথ ‘সম্প্রীতি নৃত্য’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে মেলায় আসা অনেক দর্শনার্থীই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, আগামী ১০ থেকে ১২ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা করেছে রাঙামাটির বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উদযাপন কমিটি। এরমধ্যে ১০ এপ্রিল সকালে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত র্যালি, বিকেলে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, ১১ এপ্রিল জুম্ম খেলাধুলা, বলিখেলা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ১২ এপ্রিল রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো (ফুল বিজু) অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
রাঙামাটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাব : অন্যদিকে, পাহাড়িদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (রাবিপ্রবি) সফর করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি। গতকাল বুধবার দুপুরে রাবিপ্রবি সফরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় রাবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার, উপ–উপাচার্য প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমা, রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইউসুফ, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নিখিল চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাঙামাটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাব। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সব সময় আপনাদের পাশে থাকব। এখানকার সংস্কৃতিকে কিভাবে উন্নত করব সে চেষ্টা করব। সমাজে যে সকল নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তি আর নাটক হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে আমরা পারব বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে।