চট্টগ্রাম নগরে বেড়ে চলেছে মশার উপদ্রব। শীতের মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। স্থানীয় লোকজন বলেন, নগরের বিভিন্ন এলাকায় নালা নির্মাণের কাজ চলছে। অনেক স্থানে নালার মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় পানি চলাচল করতে না পারায় আটকে পড়া পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। তবে মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সিটি করপোরেশনকে।
গত ৩০ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘মশা যেন শহরের রাজা, ঘরে–বাইরে কোথাও রক্ষা নেই, কী করছে চসিক, স্প্রে ম্যানের সংকট, ডেঙ্গু নিয়েও শঙ্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাত্র ২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম ওজনের ছোট্ট পতঙ্গ মশা শহরের রাজা হয়ে উঠেছে? এ মশা নিয়ন্ত্রণের কি কোনো উপায় নেই? কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন শহরে যে মশার উপদ্রব বেড়েছে তা ‘কিউলেক্স মশা’। তাপমাত্রা বাড়লে বৃদ্ধি পায় এ মশার উপদ্রবও। সাধারণত তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে কিউলেক্সের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। চলতি মাসে প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। ফলে প্রাকৃতিকভাবেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময় এখন। এ ছাড়া কিউলেক্স মশা সাধারণত দূষিত পানিতে জন্মায়। এদিকে শহরের নালা–নর্দমাগুলো ময়লা–আবর্জনায় ভরে আছে। যা কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। শহরের প্রধান খালগুলো ছাড়াও সেকেন্ডারি ড্রেনগুলোও আবর্জনায় পূর্ণ। যা কিউলেক্স মশার লার্ভা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। খাল–নালাগুলো ভরাট থাকায় বন্ধ আছে স্বাভাবিক পানি প্রবাহও। অথচ পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে খাল হয়ে মশার লার্ভা চলে যায় নদী বা সমুদ্রে। অর্থাৎ তাপমাত্রাজনিত কারণে প্রাকৃতিকভাবে মশার বংশ বিস্তার যেমন হচ্ছে তেমনি মনুষ্য সৃষ্ট কারণেও খাল–নালা বন্ধ থাকায় বাড়ছে মশার উপদ্রব।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নগরে মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব চসিকের। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মশার উপদ্রব বাড়লেও কী করছে চসিক? সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দাবি করছেন, হঠাৎ মশার উপদ্রব একটু বেড়েছে। তবে সেটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। মশক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। তবে নগরবাসী বলছেন, কীটনাশক ছিটাতে তারা দেখছেন না। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও আছে নগরবাসীর। এদিকে জানা গেছে, মশা নিয়ন্ত্রণে দুই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে চসিক। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসে ‘এডাল্টিসাইড’ এবং মশার লার্ভা মারতে ব্যবহার করে ‘লার্ভিসাইড’। এর মধ্যে কিছুদিন সংকট ছিল এডাল্টিসাইডের। সম্প্রতি সাড়ে ৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড সংগ্রহ করা হয়। ফলে এখন আবার মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
বর্তমানে মশার উপদ্রব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উৎপাত অতিরিক্ত ও অসহ্য। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়, ভোর রাতে বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কয়েল জ্বালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশার উৎপাত কমাতে হলে চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে প্রথমত ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হবে, ঝোপ–জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে মশার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব না। মশার কামড়ে অনেক রোগ হচ্ছে। সমপ্রতি মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ড্রেনে জলাবদ্ধতা আর যত্রতত্র ময়লা ফেলা। মশার বংশবিস্তার কমাতে সিটি করপোরেশনের এমন মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করা উচিত, যেটা কার্যকর।
বলা অনাবশ্যক যে, নগরীর প্রায় সত্তর লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও মশা নির্মূল করা যায়নি। ফলে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২২ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এ সময় মারা গেছেন ৩ জন। অথচ ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূলে গত অর্থবছরে সিটি করপোরেশন প্রচুর টাকা খরচ করেছে। স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, মশা নিধনের এত বিপুল অর্থ কোথায় যায়।