ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের ৯টি পয়েন্টে ঈদযাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবছর ঈদ এলেই প্রশাসন যানজট নিরসনের ঘোষণা দেয়। তবে মহাসড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা কন্টেনার ডিপোগুলোর গাড়ির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, সীতাকুণ্ডের বড় বড় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কন্টেনার ডিপোর মালামাল বহনকারী গাড়িগুলো মহাসড়ক দখল করে থাকার কারণে ঈদযাত্রায় যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের এ অংশে থাকা ২১টি ইউটার্নে লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন ইউটার্ন নেওয়ার কারণে যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে যানজটের শঙ্কায় ঈদে ১৩টি ইউটার্ন বন্ধ রাখতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে লিখিত আবেদন করেছে বার আউলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন চন্দ্র ঘোষ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, আসন্ন ঈদে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যেসব পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে সেগুলো হল–মহাসড়কের ছোট কুমিরা বাজার ক্রসিং, কুমিরা রয়েল গেট থেকে হতে ঘোড়ামারা কেডিএস কন্টেনার ডিপো পর্যন্ত, চৌধুরী ঘাটা থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত, ভাটিয়ারী বাসস্ট্যান্ড, ফৌজদার হাট থেকে লিংক রোড পর্যন্ত, লিংক রোড থেকে সিটি গেট পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী সড়ক, সিটি গেট থেকে লিংক রোড পর্যন্ত ঢাকামুখী সড়কে, বড় দারোগার হাটের ওজন স্কেল ও সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ড। এছাড়াও যানজট নিরসনে এমপি বাড়ি কাটা, বানুর বাজার কাটা, বিএম গেট কাটা, মাদামবিবির হাট কেএসআরএম গেট, রাজা কাশেম স্কুল, চৌধুরীঘাটা, বক্তারপাড়া কেএসআরএম, পাক্কা মসজিদ, কুমিরা রয়েল গেট, কুমিরা রোজ গার্ডেন, বাঁশবাড়িয়া, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ ও ডালাস পাম্পের কাটাসহ মোট ১৩টি কাটা স্থান (ইউটার্ন) বন্ধ রাখতে সওজকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পথচারী, চালক ও যাত্রীরা জানান, চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত মহাসড়কের এ অংশে সড়কের পাশ দখল করে রাখা অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও তিনটি কনটেনার ডিপোর মালবাহী ট্রাক–লরির মহাসড়ক দখল করে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকা, ট্রাফিক আইন অমান্য করে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা, সড়কের পাশ দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে তোলা, অবৈধ স্ট্যান্ড, পুলিশের চাঁদাবাজি, সিএনজি টেক্সি, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে দূরপাল্লার গাড়ির গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সওজের সংস্কার কাজের কারণে যানজট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এতে আসন্ন ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন বাড়লে আরো যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
চালকরা জানান, মহাসড়ক দখল করে রাখা শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, মহাসড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি কন্টেনার ডিপোর মালবাহী লরি ও ট্রাক, অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ ও ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে মহাসড়কের এই অংশে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়েন তারা। ঈদের আগে সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধের পাশাপাশি মহাসড়ক দখল করে থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কন্টেনার ডিপোর গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে না নিলে ঈদে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ জানান, যানজট নিরসনে তার অধীনে থাকা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেট থেকে বাড়বকুণ্ড এলাকার সাতটি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছেন তিনি। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন লিংক রোড চৌরাস্তা, ভাটিয়ারী ও বাড়বকুণ্ড বাজার এলাকাকে। সেই সাথে যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সিটি গেট থেকে বাড়বকুণ্ড পর্যন্ত মহাসড়কের ১৩টি ইউটার্নকে। তিনি আরও জানান, মহাসড়কের উভয়মুখী অপরিকল্পিত ইউর্টানগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি প্রবেশ, কন্টেনার ডিপোসহ মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা গাড়ি প্রবেশ, বন্দরের অধিক সংখ্যক গাড়ি মহাসড়কের এ অংশে প্রবেশ ও চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশ মুখ হওয়ার কারণে অধিকাংশ গাড়ি প্রবেশের চাপ থাকায় ঈদে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। তবে তারা যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে মহাসড়কে চলমান সড়ক সংস্কার কাজ ২০ রমজানের পর বন্ধ রাখতে সওজ কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। সেই সাথে ঈদের তিন দিন আগে থেকে ইউর্টানগুলো বন্ধ রাখতে লিখিত চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন তিনি। পাশাপাশি মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে সেখানে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান ওসি।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আব্দুল হাকিম আজাদ জানান, প্রতিবছর ঈদে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যার ফলে ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিয়ম ভাঙেন চালকরা, যার ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। এবারের ঈদ যাত্রায় মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশকে যানজট মুক্ত রাখতে এবং মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা।