জন্মের এক মাস পর নাম পেল জো বাইডেনের তিন কন্যা। গতকাল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ শাবক তিনটির নাম রাখা হয় অরণ্য, স্রোতস্বিনী ও রূপসী। বাঘ জো বাইডেন ও বাঘিনী জয়ার ঘর আলো করে গত মাসে শাবক তিনটির জন্ম হয়। গতকাল তাদের নামকরণ করা হয়। এ উপলক্ষে শাবকগুলোকে প্রথমবারের মতো খাঁচার বাইরে কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই নামকরণের এই আয়োজন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, এক মাস বয়সী এবং সারাক্ষণ দুষ্টুমিতে মেতে থাকা চঞ্চলা তিন কন্যা এবারের ঈদে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠবে। তিনি জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি জো বাইডেন পরিবারে তিনটি বাচ্চার জন্ম হয়। তিনটি বাঘ শাবকের জন্ম আমাদের আনন্দিত করে। সাতদিন পর আমরা লিঙ্গ নির্ধারণ করতে গিয়ে নিশ্চিত হই শাবকগুলো মেয়ে। জো বাইডেনের তিন কন্যা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এক মাস পার হওয়ার পর আমরা প্রথমবারের মতো এগুলো উন্মুক্ত করেছি। এজন্য নামকরণের আয়োজন করেছি। ফিজিক্যালি এগুলো এখন যথেষ্ট ভালো আছে। মায়ের ভালো রেসপন্স পাচ্ছে। হাঁটাচলা, দৌড়ানো শিখতে শুরু করেছে।
ডা. শুভ বলেন, আসন্ন ঈদে এই তিনটি ছোট বাঘ সকল বয়সী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে আশা করছি। এগুলো মা–বাবার সাথে একই খাঁচায় অবস্থান করবে।
গতকাল নামকরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। শুরুতে বেলা ১২টার দিকে কিউরেটর শুভ বাঘ শাবক তিনটিকে খাঁচা থেকে বের করে জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন। যেন বাঘ দিয়ে অতিথি বরণ। পরে সাথে থাকা অতিথি এবং সাংবাদিকদের বাঘের শাবক কোলে নিতে দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো এত মানুষের সংস্পর্শে এলেও ভয়হীন ছিল শাবকগুলো।
বাঘ শাবক কোলে নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, তিনটি ব্যাঘ্র শাবকের বয়স এক মাস পূর্ণ হয়েছে। তিনটিই মেয়ে। আমরা এগুলোর নামকরণ করেছি। একটির নাম অরণ্য, একটির নাম রূপসী এবং আরেকটির নাম স্রোতস্বিনী। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তিনটি বাঘের বাংলা নাম রেখেছি। এ তিনটি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে জো বাইডেন পরিবারে। প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে বাঘটির নাম জো বাইডেন রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৬ সালে প্রথম দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আনা হয়েছিল।দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা ওই দুটি বাঘ বংশবিস্তার করে এখন আমাদের ১৯টি বাঘ হয়েছে। প্রাণী বিনিময় চুক্তির আওতায় ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘ দিয়ে আমরা দুটি জলহস্তী পেয়েছি। সেজন্য এখন বাঘের সংখ্যা ১৭টি।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শুভ জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘের বংশবিস্তার স্বাভাবিক। তিনি বলেন, এই চিড়িয়াখানায় প্রথম বাঘ আসে ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর। প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা আনা হয় ১১ মাস বয়সী রাজ এবং ৯ মাস বয়সী পরীকে। দেড় বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রাজ–পরী দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় তিনটি শাবক। এর মধ্যে দুটি ছিল বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। অপরটি কমলা–কালো ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। জন্মের একদিন পরই সাদা বাঘ শাবকের একটি মারা যায়। পরে বেঁচে থাকা সাদা মেয়ে বাঘ শাবকটির নাম দেওয়া হয় শুভ্রা। কমলা–কালো ডোরাকাটা মেয়ে বাঘ শাবকটির নাম দেওয়া হয় ‘জয়া’। শুভ্রা বাংলাদেশের চিড়িয়াখানায় প্রথম সাদা বাঘ।
তিনি বলেন, বড় হওয়ার পর জয়া মা হয়। ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর জয়া তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। কিন্তু শাবকগুলোর সাথে মায়ের মতো আচরণ করেনি। সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে সে অসহিঞ্চু হয়ে উঠেছিল। তিনটি শাবককে দুধ দেয়নি, কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। মায়ের অবহেলায় এক রাত পরে দুটি শাবক মারা যায়।
মরতে বাসা অপর শাবকটিকে খাঁচা থেকে বের করে নিজের কাছে নিয়ে আসেন কিউরেটর শুভ। যত্ন ও সেবার মাধ্যমে শাবকটির জীবন রক্ষা পায়। ফিডারে করে দুধ খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সবকিছু করতে হয়েছিল নিবিড়ভাবে। বাচ্চাটিকে খাঁচায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। চিড়িয়াখানার কর্মীদের নিরলস চেষ্টায় শাবকটির জীবন রক্ষা পায়। সাড়ে ৫ মাস পর ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। শাবকটির নাম রাখা হয়েছিল জো বাইডেন। সেই জো বাইডেনের ঔরসে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জন্ম নেয় তিনটি শাবক।
ডা. শুভ জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ১৭টি বাঘের মধ্যে পাঁচটি ছেলে ও ১২টি মেয়ে। এর মধ্যে আবার পাঁচটি বিরল সাদা বাঘ। বাঘের দিক থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সমৃদ্ধ।
উল্লেখ্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে বাঘ, সিংহ, কুমির, জলহস্তী, হরিণসহ ৬৬ প্রজাতির ৬৫৭টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৮ প্রজাতির পাখি এবং ৪ প্রজাতির সরীসৃপ।