ফুটবল খেলতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিল ১৪ বছরের দুরন্ত কিশোর ফাহিম। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করার পরও ভালো হয়নি সেই পা। এক সময় পচন ধরায় কেটে ফেলতে হয় পা’টি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। ততদিনে মরণব্যাধি ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে তার শরীরে। অটোচালক বাবা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েও বাঁচাতে পারলেন না প্রথম সন্তানকে। ক্যান্সারের কাছে হেরে গেল ফাহিমের জীবন। গত রোববার রাত ১১টায় বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের বৈলগাঁও গ্রামে ফাহিম শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
পূর্ব বৈলগাঁও গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম ও কামরুন্নাহার দম্পতির বড় ছেলে ফাহিম। বাবা শহিদুল একজন অটোরিকশা চালক। এক বছর আগে পূর্ব বৈলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে।
শহিদুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বছর আগে স্থানীয় মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পায় ফাহিম। ঘটনার পরে আস্তে আস্তে তার পা ফুলতে থাকে। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর চকরিয়ার ডুলাহাজারায় এরপর নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তার। ততদিনে তার ডান পায়ের ভিতরে পচন ধরে যায়। ৪ মাস আগে চমেক হাসপাতালের ডাক্তার জানান ফাহিমের পায়ের পচন থেকে ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শে অগত্যা শিশুটির ডান পা কেটে ফেলতে হয়।
দুরন্ত–ডানপিটে ফাহিমের হাসিখুশি জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। থেমে যায় তার সুস্থ শৈশব। বন্ধ হয়ে গেল স্কুলে যাওয়া। সেই থেকে অটোরিকশাচালক শহিদুল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পাশাপাশি ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান। একপর্যায়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আর্থিক সহায়তা চাইলে অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পাঁচটি কেমোথেরাপির খরচ বহনের পর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন শহিদুল। ডাক্তারের পরামর্শে ছেলেকে নিয়ে আসেন বাড়িতে।
গত রোববার রাত ১১টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফাহিম। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় পূর্ব বৈলগাঁও নয়া দিঘীর পাড় স্থানীয় জামে মসজিদের মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম সালাহ উদ্দিন কামাল স্কুল শিক্ষার্থী ফাহিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।