চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সার্টিফিকেট ও এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ফুটপাত দখলকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছেন, নগরীকে বাসযোগ্য ও জনগণের চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য অবৈধভাবে দখল করা ফুটপাত উদ্ধার করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত হকারদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য হলিডে এবং নাইট মার্কেট চালু করার চিন্তা ভাবনা করছি। এছাড়া চট্টগ্রামকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় এবং সত্যিকার বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিকমানের কনভেনশন ও এক্সিভিশন সেন্টার করার চেষ্টা করছে সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে, হকার উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা ফুটপাত পুনর্দখল রোধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার নগরের পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। এ সময় হকারদের বেশ কিছু অস্থায়ী চৌকি ও টুল ভেঙে দেওয়া হয়। জব্দ করা হয় বিভিন্ন মালামালও।
অভিযানে অংশ নেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম, চৈতী সর্ববিদ্যা ও শাহরীন ফেরদৌসী। স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন বলেন, পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযান চালিয়ে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করা হকারদের সরিয়ে দিয়েছি আমরা। এ সময় ফুটপাত দখল করে বসানো দোকানের অস্থায়ী চৌকি, টুল ইত্যাদি ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং দখলকারী কিছু ব্যক্তির মালামালও জব্দ করেছি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের লক্ষ্য হচ্ছে–ফুটপাত–সড়ক আমরা দখল হতে দেব না। পুরো শহরের সব ফুটপাত–সড়কই আমাদের কার্যক্রমের আওতায় আসবে। পুনর্দখল ঠেকাতে মনিটরিং চলমান থাকবে।
পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এটা দোকানদার ও হকাররা দখল করে রাখছে। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে।’ তাঁরা বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য। জামালখান এলাকার ফুটপাতের যে জায়গা এর অর্ধেকটা জুড়েই দোকান। কাজেই মানুষের হাঁটাচলার জন্য খুব অল্প জায়গা অবশিষ্ট আছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।’
এই ফুটপাত যাতে পুনরায় দখল হয়ে না যায় সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি মেয়র যে ভূমিকা পালন করছেন, তা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, ‘আমি সাহস করে এবং নিজের উপর ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। উদ্ধার হওয়া জায়গা রক্ষায় কাঁটাতারের বেড়াও দিয়েছি। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া জায়গায় নিয়মিত মনিটরিং চলবে। কোনো হুমকি, ধামকি বা প্রলোভনে কাজ হবে না। যে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তাদের স্বার্থে কাজ করে যাব।’ আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য সিটি মেয়রকে অভিনন্দন জানাই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তাঁরা বলেন, ফুটপাতে শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালালেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।