যে জলদস্যু দল সাগরে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের সঙ্গে ভূমির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান শুরু করেছে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ। সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডারের বরাত দিয়ে বিবিসি সোমালি গতকাল শুক্রবার এ খবর দিয়েছে।
পুলিশ কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুউফ বলছেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন আছে জিফলের উপকূলীয় এলাকায়। জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি, যাতে তারা এই এলাকার ভূমি থেকে আর কোনো সহযোগিতা না পায়। আমরা এখন তীরে আছি। আমাদের পরিকল্পনা হল, জলদস্যুরা যাতে নিজেদের সংগঠিত করতে না পারে এবং এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যারা আছে, তারা যাতে তীর থেকে আর কোনো সাহায্য না পায়। সমুদ্রের অংশে তারা আন্তর্জাতিক বাহিনীর ঘোরওয়ের মধ্যে আছে। তাই সেদিক থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশ কমান্ডার মারদুউফ বিবিসি সোমলিকে বলেন, জাহাজে থাকা জলদস্যুদের হাতে এখন দুটি বিকল্প আছে। হয় তাদের পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ভোগ করবে, অথবা আগের জাহাজ, অর্থাৎ বিদেশি বাহিনী যেমন এমভি রুয়েন থেকে জলদস্যুদের ধরে নিয়ে গেছে, সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরা যে প্রায় দুই ডজন জাহাজে হামলা করেছে, তার মধ্যে সর্বশেষ দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। নুগাল পুলিশ প্রধান মারদুউফ বিবিসিকে বলেন, জাহাজ ও ক্রুদের বাঁচাতে যে কোনো অভিযানে অংশ নিতে তারা প্রস্তুত।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, পান্টল্যান্ড পুলিশ কয়েক দিন আগে একটি নৌযান জব্দ করে, যাতে করে আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা জলদস্যুদের জন্য ‘খাত’ নামের এক ধরনের মাদক সরবরাহ করা হচ্ছিল। জলদস্যুদের যে দলটি আবদুল্লাহকে দখল করে রেখেছে, সেই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে স্থানীয় পুলিশ। বিবিসি সোমালি জানিয়েছে, পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষ নিজেদের উপকূল জলদস্যুমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর কাছেই একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স–ইইউএনএভিএফওআর এর আটলান্টা অপারেশন। মাইক্রোব্লগিং সাইট এঙে (সাবেক টুইটার) ইইউএনএভিএফওআরের পোস্টের সঙ্গে যুক্ত একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে এমভি আবদুল্লাহর অদূরে অপারেশন আটলান্টার যুদ্ধ জাহাজটি অবস্থান করতে দেখা গেছে। এছাড়া আবদুল্লাহর কাছাকাছি চক্কর দিচ্ছিল একটি হেলিকপ্টার।
তবে নাবিকদের ‘নিরাপত্তা শঙ্কায়’ এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে কোনো অভিযান চায় না জাহাজটির মূল মালিক কোম্পানি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ। গত বুধবার দুপুরে তারা জানায়, জলদস্যুরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রথমবারের মত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজের নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপে সমর্থন করছি না। বাংলাদেশ সরকারেরও একই চাওয়া।
জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়ার পর বেশ কয়েকবার অবস্থান বদলে বর্তমানে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়ার পান্টল্যাণ্ড অঞ্চলের উপকূলের মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স এর আগে আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম জানিয়েছিলেন। ২০১০ সালে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মনিও সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর জাহাজ এবং নাবিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছিল সে সময়।












