চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেছেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমি এবং আমার স্ত্রীকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা নাকি টিআর–কাবিখা আর মসজিদের টাকা মেরে দিয়েছি। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলবো, আমার আমলে এক টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সাতকানিয়া–লোহাগড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি’, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা–মামলা’র প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
আবু রেজা নদভী বলেছেন, গত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় জামায়াতপন্থী ওয়ায়েজদের স্থান হয়নি। গত দুই মাসে সাতকানিয়া–লোহাগাড়ায় জামায়াতপন্থী ওয়ায়েজদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল শুরু গেছে। তার ইতোমধ্যে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাতকানিয়া–লোহাগাড়ায় এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রদানকারী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন।
চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে জামায়াতের এমপি বলে সম্বোধন করেছেন একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে এমন অভিযোগ করে ড. আবু রেজা নদভী বলেন, নির্বাচনের পর থেকে সাতকানিয়া–লোহাগড়ায় জামায়াত তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। পদুয়াতে ৩/৪ হাজার শিবিরের নেতাকর্মী মিছিল করেছে। মনে হচ্ছে তারা এখান থেকে ইসলামি স্টেটের কাজ শুরু করেছে। তাহলে স্বতন্ত্র এমপি সাহেব সরকারের এমপি, না কি জামায়াতের এমপি আমি জানি না।
আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, দুটি উপজেলায় গত ১০ বছরে ৫০০ মসজিদ করেছি। হাজার হাজার নলকূপ স্থাপন করেছি। সরকারি সহায়তার বাইরে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন থেকে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। যেখানে আমি বিদেশ থেকে টাকা এনে এলাকার উন্নয়ন করেছি। সেখানে আমাকে কাবিখা প্রকল্পে দুর্নীতি কেন করতে হবে? তিনি বলেন, প্রকল্প এসেছে, আমি তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন দুর্নীতি হলে সেখানে হতে পারে, কিন্তু অন্যের দোষ আমার ঘাড়ে কেন চাপানো হচ্ছে।
ড. আবু রেজা নদভী বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে এখন সাতকানিয়া–লোহাগড়ায় নৌকা নাই, নৌকা নাই মানে আওয়ামী লীগ নাই। স্বতন্ত্র আছে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, স্বতন্ত্রও নাই, জামায়াত আছে। এখন জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার নাই, যারা মাঠে নাই।
গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বর্তমান এমপির প্রত্যক্ষ মদদে সাতকানিয়া–লোহাগাড়ায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়ি–ঘর ভাঙচুর, ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। নৌকার পক্ষে যারা কাজ করেছেন (ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা) বাড়ি ঘরে যেতে পারছেন না। অনেকেই বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছেন। অনেকেই ঢাকায় চলে গেছেন। অনেকেই চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আমার শহরের বাসায় আপনারা (সাংবাদিকরা) গিয়ে দেখেন–সেখানে কয়জন আছেন। অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত দুই মাসে এই পর্যন্ত ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরে গত জন মার্ডার হবে আপনারা চিন্তা করেন। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য সীমাহীন বেড়ে গেছে। আমার ১০ বছরের আমলে সাতাকানিয়া–লোহাগাড়ায় মানুষ রাত ২টা–৩টা পর্যন্ত নির্ভয়ে চলা ফেরা করতে পেরেছিল। এখন মানুষ রাত ১২টার পর বের হতে ভয় পায়। ছিনতাই করে, ডাকাতি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সীমাহীন বেড়ে গেছে। মানুষ ভয়ে চলাফেরা করতে পারে না। কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে গেছে। প্রশাসন নীরব।
যেখানে আমার ১০ বছরে একজনও মার্ডার হয়নি। আমি এমপি হওয়ার আগে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তার চাইতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কি ঘটনা ঘটে আমি জানি না। এমন কোনো দিন নাই ডাকাতি হচ্ছে না, কেউ না কেউ আহত হচ্ছে না।
এসব ঘটনার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান ও চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মোতালেবকে দায়ী করেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক সাংসদ আবু রেজা নদভী বলেন, সাতকানিয়া–লোহাগড়ায় আজকের এই অরাজকতার মূল নায়ক হচ্ছেন একজন সন্ত্রাসী–গডফাদার। ২০১৪ সালে তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। একবার আমি একটি প্রকল্প উদ্বোধন করতে গেলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে সেখানে চলে এসেছিল, তাই আমি আর তাকে আমার কাছে ঘেঁষতে দেইনি।
নদভী বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর কেরানীহাট এলাকার মুসলিম উদ্দিন ও ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের জমি দখলের চেষ্টা করেন। এরপর থেকে তিনি আমার পেছনে আধাজল খেয়ে নামেন। মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁধে ভর করে নৌকাকে ডোবান।
এসময় তিনি নিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমানকে দায়ী করেন।
নদভী বলেন, আমার আজকে আপনাদের সঙ্গে এই সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে। দুদিন আগে আমাদের বাড়ির সামনে ডা. মিনহাজ আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। ওই মানববন্ধনের ব্যানার ও ফেস্টুনে আমি ও আমার স্ত্রীর নাম লেখা ছিল। আমরা নাকি টিআর–কাবিখাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লুটপাট করেছি।
‘আমি মিনহাজুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, সরকারি উন্নয়নের পাশাপাশি যে ব্যক্তি সৌদি আরবের বাদশাহর সংস্থা থেকে, ওআইসি থেকে, কুয়েতসহ নানা দেশ থেকে শত শত কোটি টাকার চ্যারিটি করছে ওই লোক দুর্নীতি করে? আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনে এমন অডিট হয়, যেখানে একটি টাকা এদিক ওদিক যেতে পারে না।’ আমি কি লুটপাট করেছি তার প্রমাণ দিতে না পারলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
আবু রেজা নদভী বলেন, আমি এই দেশে ২৬ বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। হাজারো মসজিদ, ওজুখানা, মাদ্রাসা কমপ্লেঙ নির্মাণ করেছি। ৩০ হাজারের মত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করেছি আরব বিশ্বসহ পৃথিবীর নানা দেশের সহায়তায়। বিভিন্ন দুর্যোগে এ পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষের হাতে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি।
এই লোকগুলো বিমানের টিকিটের ভুয়া ছবি বানিয়ে ফেসবুকে প্রচার করেছে, আমি নাকি নির্বাচনের পরের দিন ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছি। অথচ আমি আজকের দিন পর্যন্ত দেশে আছি। আসলে ভয় পেয়ে তারা এসব অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। আমি জনগণের খেদমত করছি ২৫ বছর ধরে, যা আমৃত্যু অব্যাহত থাকবে। রাজনীতি করতে হলে জনমুখী হতে হবে। জনগণের উন্নয়ন চিন্তা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি গণি সম্রাট, নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোখলেস উদ্দিন জাকের।