রমজানে গরমের প্রকোপ বাড়ছে ধীরে ধীরে। তার সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও এতো বেশি লোডশেডিং অসহ্য ও বিরক্তিকর।
গত ১৭ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘চাহিদার বেশি উৎপাদন, তবুও চট্টগ্রামে লোডশেডিং’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। চট্টগ্রামে এখন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ১১৮০ থেকে ১২শ’ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৫০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। কিন্তু তারপরও চট্টগ্রামে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জানা গেছে, এই রমজানে ইফতার ও সেহেরির সময় ঢাকায় কোথাও লোডশেডিং নেই। ঢাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে না। অথচ চট্টগ্রামে লোডশেডিং করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে চট্টগ্রামের চাহিদার অতিরিক্ত ৩৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তারপরও ১৬ মার্চ চট্টগ্রামে ১৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল বলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কাছ থেকে জানা গেছে। পিডিবি চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) এর দপ্তর থেকে প্রতিদিনের উৎপাদন তালিকায় দেখা গেছে, গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোতে ১৬৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর এদিন চট্টগ্রামের চাহিদা ছিল মাত্র ১১০৮ মেগাওয়াট। রমজানে চট্টগ্রামের চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে রেখে সাড়ে ৪শ’ থেকে প্রায় ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উৎপাদন সক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই। তবে ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে। চাহিদা মতো জ্বালানি না পাওয়ায় গেল দু’বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে গ্রাহককে। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে ১১ শতাংশের মতো। একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে একই হারে। তবে গত বছরের মতোই সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসিয়ে রাখতে হতে পারে জ্বালানির অভাবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে শুরু থেকে দুশ্চিন্তায় ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। ডলার সংকটের কারণে এই খাতের ভোগান্তি আরও বাড়ার আশংকা রয়েছে। শীত শেষ হতে না হতেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এখন খুব বেশি না হলেও গরম বাড়লে তা আরও বাড়তে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে চেষ্টা করা হবে। তবে জ্বালানি সংকট এবং সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরবরাহ কম থাকলে লোডশেডিং করতে হবে। গতবছরও আমরা তা দেখেছি। আর্থিক সংকট, ডলার সংকট রয়েছে। এসব কারণে রমজান ও গরমে সাধারণ ভোক্তাদের বিদ্যুতের জন্য ভুগতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে চরম ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের চরম অব্যবস্থাপনার জন্য ভোক্তারা মাসুল দিচ্ছেন। ব্যয় না কমিয়ে মূল্য বাড়িয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির সংস্থান কীভাবে হবে তার পরিকল্পনা করা হয়নি।
আসলে রমজানে গ্রাহকদেরকে স্বস্তিতে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে। প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের। গরম ও সেচের কথা চিন্তা করে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতো উদ্যোগ সফল হলো না। গ্রাহকরা ঠিকই ভুগছেন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায়।
পবিত্র রমজান মাসে অনেক কিছুতেই অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে হবে। এরমধ্যে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অন্যতম। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে যেমন তার ব্যবস্থা নিতে হবে সাথে সাথে, তেমনি লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে। এই মাসে ঘন ঘন লোডশেডিং কোনোভাবেই কাম্য নয়।