সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর চার দিন আগে যে ২৯টি কৃষি পণ্যের ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অবাস্তব’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, উৎপাদন ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা মূল্যও বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃষি বিপণনের বেঁধে দেওয়া ‘যৌক্তিক মূল্য’ আসলে ‘অযৌক্তিক’।
রাজধানীর মগবাজারে দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির নেতারা। খবর বিডিনিউজের।
সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পণ্য মূল্য বেঁধে দেওয়া এক অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত। এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে সরকার ও ব্যবসায়ী উভয়পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও টিসিবির মূল্য তালিকা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাজারে ভয়াবহ পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
সবশেষ ১৫ মার্চ গরুর মাংসসহ ২৯টি পণ্যের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর; যদিও বাজারে তা মানা হয় না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গত সোমবার বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পণ্যের একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই অধিদপ্তরের নিজস্ব জেলা, উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কমিটি আছে। আমরা যেহেতু বাজার মনিটরিং করি, আমরা সমন্বয় করে মনিটরিং শুরু করব।
কিন্তু দাম বেঁধে দেওয়ার ওই প্রজ্ঞাপনকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানান হেলাল উদ্দিন। তার ভাষ্য, সে ক্ষেত্রে আমাদের দাবি উনাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রির ব্যবস্থা করবে। এতে প্রয়োজনে বিভিন্ন বাজারে আমরা স্থান সংকুলান করব।
পণ্যমূল্যে ৮২ পয়সা, ৩৩ পয়সা নির্ধারণকে ‘অযৌক্তিক ও অবাস্তব’ অ্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি আমার কাছ থেকে ১ কেজি বেগুন কেনে, তাকে আমি ১ পয়সা ফেরত দেব, কীভাবে? ফেরত না দিলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমার সব মিলিয়ে পুঁজি হবে ১০ হাজার টাকা, জরিমানা হবে ৫০ হাজার টাকা। যে কয়েনটি বাংলাদেশে নাই, সেই কয়েনের ভিত্তিতে আমাকে ব্যবসা করতে হবে। এর চেয়ে দুঃখজনক, লজ্জাজনক আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। খুচরা ব্যবসায়ীদের ‘লাভ কম হয়’ দাবি করে হেলাল বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কত টাকাই আর লাভ হয়? পাইকারি পর্যায়ে অথবা আমদানি পর্যায়ে যারা এগুলো আনে, তারা কী পরিমাণ টাকার মালিক আর আমাদের খুচরা ব্যবসায়ীরা বস্তিতে থাকে, ছেঁড়া গেঞ্জি পরেই তাকে ব্যবসা করতে হয়। দিনশেষে ওই খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। যারা হাজার–হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের কিন্তু কিছু হয় না। দিনশেষে কেষ্টা বেটাই চোর।
মূল্য তালিকা ‘আলোচনা করে নির্ধারণ করা হয়নি’ দাবি করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। বাজারে আমরা সর্বশেষ (খুচরা ব্যবসায়ী)। আমাদের সঙ্গে বসে যদি উনারা নির্ধারণ করতেন, তাহলে ঠিক ছিল। আর বিপণন অধিদপ্তর নিজেরাই তো বিক্রি করতে পারে, দাম বেঁধে দেওয়ার তো কোনো কারণ নাই। তাহলে আমরা বুঝতাম, কে বেশি দামে বিক্রি করছে, কে কম দামে বিক্রি করছে। তা না করে উনারা ঘরে বসে একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন, সেটা আমাদের মেনে চলতে হবে। এটা খুব অবাস্তব।
মূল্য তালিকা নির্ধারণে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশি রসুন বলা হয়েছে ৭২ টাকা ৯৬ পয়সায় বিক্রি করতে, এটা এখন বাজারে ১৫০ টাকায় পাওয়া যায়। এখন আপনি কী করবেন? উনাদের নির্ধারিত মূল্যে খুচরা পর্যায়ে কোনো পণ্য উনারা কিনতে পারবেন না। উনারা বাস্তব বিবর্জিত, ঘুমের মধ্যে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এই মূল্য তালিকা অযৌক্তিক। আমরা বলতে চাচ্ছি টোটাল বিষয়টা যদি একত্রে করে না দেখা হয়, পথে–পথে চাঁদাবাজি বন্ধ না হয়, দিন শেষে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমস্যা বাড়ে, অন্য কারো কিছু হয় না। আমরা চাই সকল ক্ষেত্রে মনিটরিং হোক।