স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন নাবিকরা

এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে জলদস্যুরা

হাসান আকবর | সোমবার , ১৮ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

নৌবাহিনী কিংবা কমান্ডো অভিযানে ভারত মহাসাগরে ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিপিং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দস্যুদের দখলে থাকা জাহাজটি উদ্ধারে মুক্তিপণই একমাত্র সমাধান। তবে এই পণের জন্য গতকাল পর্যন্ত কোনো দাবি জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে এসআর শিপিং। সোমালি জলদস্যুদের কাছ থেকে মাস কয়েক আগে ছিনতাই হওয়া মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজ ভারতীয় নৌবাহিনী কমান্ডো অভিযানে উদ্ধারের পর এমভি আবদুল্লাহতেও কমান্ডো অভিযান পরিচালনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। উদ্ধার করা এমভি রুয়েনে থাকা ১৭ জন নাবিককে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছিল। একইসাথে জাহাজে অবস্থান করা ৩৫ জন জলদস্যুও আত্মসমর্পণ করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে অনেকে আশান্বিত হলেও এমভি আবদুল্লাহতে ওই ধরনের অপারেশন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এসআর শিপিংয়ের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। নাবিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে ভারতীয় নৌবাহিনীকে কোনো অপারেশন চালানোর অনুমোদন দেবেন না উল্লেখ করে জাহাজ মালিকের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। মালিকপক্ষ বলেছে, তাদের কাছে নাবিকদের জীবন আগে, জাহাজের চিন্তা পরে। নাবিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এমন কোনো কাজ আমরা করব না, করতে দিতে পারি না।

এদিকে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে গতকাল পুনরায় যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জাহাজটি সাগরে নোঙর করা আছে। এটিকে আর স্থানান্তর করা হবে না বলে নাবিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে এসআর শিপিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নাবিকেরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন। জাহাজে জলদস্যুরা ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর চোখে পড়ার মতো তৎপরতা না থাকলেও গত তিন মাস ধরে আবার তৎপরতা শুরু করে সোমালি জলদস্যুরা। গত কয়েক মাসে তারা বেশ কয়েকটি জাহাজ ছিনতাই করে নিজেদের দখলে নিয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মার্চ দুপুরে ছিনতাই করা হয় বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ নামের কার্গো ভ্যাসেল। বাংলাদেশি জাহাজটিকে জিম্মি করার পর সোমালিয়ার জলদস্যুরা নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। বিশেষ করে বিশ্বের মিডিয়ায় বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই করার খবরটি ফলাও করে প্রচার করার পর সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভির একটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে নজরদারি শুরু করে। অপারেশন আটলান্টা নামে এই কার্যক্রমের সাথে পরবর্তীতে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজও যুক্ত হয়। দুটি জাহাজই বাংলাদেশি জাহাজটিকে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি উদ্ধারের চেষ্টা করে। এতে দস্যুদের সাথে গুলি বিনিময়ও হয়েছে। কিন্তু নাবিকদের জিম্মি অবস্থায় রেখে জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে দস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে দিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে দূরে সরে যেতে বলেছে।

এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইকালে মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েনকে বেস বা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই জাহাজটি চড়েই দস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছিতে যায় এবং পরে সেখান থেকে ছোট বোট নিয়ে জাহাজে চড়াও হয়।

ভারতীয় নৌবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এঙে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশেষ কমান্ডোসহ ভারতীয় নৌবাহিনী সোমালি জলদস্যুদের হাইজ্যাক করা একটি পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করেছে এবং ১৭ জন ক্রুকে উদ্ধার করেছে। মাল্টার পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েনে অবস্থানরত ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে।

ভারত মহাসাগর থেকে এমভি রুয়েন জাহাজটি মাস কয়েক আগে ছিনতাই করা হয়। জাহাজটির মালিকের সাথে মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলছিল। তবে মুক্তিপণ আদায়ের আগে জাহাজটি নৌবাহিনী কমান্ডো অভিযানে উদ্ধার করে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কমান্ডো অভিযানে ঝুঁকি অনেক। এই ধরনের অভিযানে জিম্মি থাকা নাবিকদের জীবন পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়ে। এই ধরনের অভিযানে জয় পরাজয় ফিফটিফিফটি। মৃত্যু বা গ্রেপ্তার নিশ্চিত জানার পর দস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা মানুষ মারতে দ্বিধা করে না।

এমভি আবদুল্লাহতে কমান্ডো অভিযান চালানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন শিপিং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভি কিংবা ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ মালিকের অনুমোদন ছাড়া অভিযানে যাবে না। বাংলাদেশ যদি সহায়তা চেয়ে আবেদন করে সেক্ষেত্রে তারা কমান্ডো অভিযান বা অন্যভাবে চেষ্টা করবে।

মাল্টার জাহাজটিতে নাবিকরা ছিলেন বুলগেরিয়ার। জাহাজ মালিক ছিল ভিন্ন দেশের। আর বাংলাদেশের মালিকানাধীন জাহাজটির ২৩ জনই বাংলাদেশি। তাই কমান্ডো অভিযান চালানোর অনুমোদন দেবে না বাংলাদেশ সরকার বা জাহাজ মালিক। এ বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হবে না বলে গতকাল এসআর শিপিংয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা আজাদীকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, জাহাজটি আগের অবস্থানে রয়েছে। আমাদের ২৩ জন নাবিকের সকলে সুস্থ আছেন। তারা কথাবার্তা বলেছেন। বাড়ির সাথেও যোগাযোগ করেছেন। তাদেরকে ইফতার ও সেহেরির খাবার দেওয়া হচ্ছে। নামাজ পড়তে দেওয়া হচ্ছে। জাহাজে নাবিকদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে জাহাজটি পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। জাহাজের বিভিন্ন পয়েন্টে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত দস্যুদের পক্ষ থেকে এমভি আবদুল্লাহর মুক্তির ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। দস্যুরা কেন জাহাজটি আটক করেছে বা তাদের দাবি কী, এই সম্পর্কে কিছু জানায়নি। আমরা আলাপআলোচনার মাধ্যমে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোমালি জলদস্যুদের থামানো যাচ্ছে না কেন?
পরবর্তী নিবন্ধজোরপূর্বক উদ্ধারে ইইউর প্রস্তাবে বাংলাদেশের না