গাজায় দুই বছরের কম বয়সের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ছোট্ট এই ভূখণ্ডটিতে দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ। গতকাল ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টিন রিফিউজি (ইউএনআরডব্লিউএ) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলা হয়, গাজায় চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। ওই দিন থেকে তীব্র প্রতিশোধে গাজার উপর হামলে পড়ে ইসরায়েল। গাজা যুদ্ধের পাঁচ মাস গড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের আকাশ ও পদাতিক বাহিনীর হামলায় গাজা যেন মৃত্যুর নগরীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং বড় ধরনের মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
গাজার হাসপাতালগুলোতে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগে এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বিষয়ক ওয়াচডগ আইপিসি দ্রুত গাজায় খাদ্য সংকট পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসে সংস্থাটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সেখানে আগামী মে মাসে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আইপিসি কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে তার মধ্যে রয়েছে মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশ চরম খাদ্য সংকটে থাকবে, প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু চরম অপুষ্টির শিকার হবে এবং প্রতি ১০ হাজার জনে দুইজন প্রতিদিন অনাহারে, অপুষ্টিতে ও রোগে ভুগে মারা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে গাজায় আরো ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ত্রাণ প্রবেশ এবং বিতরণে বাধা দিচ্ছে। ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, গাজার বেসামরিকদের মধ্যে মানবিক ত্রাণ বিতরণে তারা কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে না। বরং তারা ত্রাণ বিতরণে ধীর গতির জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর অক্ষমতা এবং অদক্ষতাকে দায়ী করেছে। গাজায় আকাশ ও সমুদ্র পথে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, সড়ক পথে ত্রাণ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইউএনআরডব্লিউএর সঙ্গে হামাসের সংশ্লিষ্টতা আছে। এমনকি তাদের কয়েকজন কর্মী ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিয়েছে। তারা গাজার এই সংস্থাটিকে বন্ধ করে দিতেও বলেছে। বড় বড় কয়েকটি দাতা দেশ ইসরায়েলের অভিযোগের পর ইউএনআরডব্লিউএতে অর্থ দান বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ হামাসের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত মাসে তারা বলেছে, ইসরায়েলের
অভিযোগের পরপরই তারা তাদের ১৩ হাজার কর্মীর মধ্যে ১২ জনকে বরখাস্ত করেছে।
জাতিসংঘ এবং ইউএনআরডব্লিউএ থেকে ইসরায়েলের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। জাতিসংঘ দাতা দেশগুলোতে সহায়াত বন্ধ না করারও অনুরোধ করেছে।
গাজায় আর কোনো স্বাভাবিক শিশু জন্ম নিচ্ছে না : বাংলানিউজ জানায়, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ফিলিস্তিনে নিযুক্ত দূত ডমিনিক অ্যালেন জানিয়েছেন, গাজায় আর কোনো স্বাভাবিক আকারের শিশু জন্ম নিচ্ছে না। তিনি জানান, গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে যে চিত্র দেখা গেছে, তা কেবল দুঃস্বপ্নের সঙ্গেই তুলনীয়। তিনি জানান, গাজার হাসপাতালগুলোয় যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, তারা আকারে অনেক ছোট এবং খুবই দুর্বল অবস্থায় জন্ম নিচ্ছে আর মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশন করা হচ্ছে পর্যাপ্ত অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই।
উত্তর গাজা পরিদর্শন শেষে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা বলছেন তারা আর স্বাভাবিক আকারের কোনো শিশুর জন্ম দেখছেন না। তারা যা দেখছেন, দুঃখজনকভাবে তা হলো আরও বেশি বেশি মৃত শিশুর জন্ম এবং নবজাতকের মৃত্যু। যেগুলো অপুষ্টি, পানিশূন্যতা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে ঘটছে। কোনো বডি ব্যাগে নয় সেই সব শিশুর থাকার কথা ছিল তাদের মায়েদের কোলে।
এ সময় তিনি গাজায় আরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ ও ত্রাণ পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ সপ্তাহে গাজার ১০ লাখ নারী ও কিশোরীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে গাজা ছেড়ে যাচ্ছি এবং বিশেষ করে প্রতিদিন গড়ে যে ১৮০ জন নারী সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাদের জন্যও আমি আতঙ্কিত।