বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে দেশের উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে ১৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ছাড় করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ছাড়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও পৌরসভার উন্নয়নে খরচ করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পৌরসভা ও উপজেলার উন্নয়ন বাজেটে উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পৌরসভার জন্য বরাদ্দ আছে ৪০০ কোটি টাকা। যার ২৩৪ কোটি টাকা রক্ষিত আছে সাধারণ বা থোক উন্নয়ন উপ–খাতে। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তি বাবদ দেশের ৩২১টি পৌরসভার অনুকূলে ৫৭ কোটি টাকা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা ছাড় করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ৯৩ হাজার টাকা। এ বিষয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ–সচিব ড. সালমা সিদ্দিকা দাপ্তরিক পত্র দেন একই বিভাগের চিফ অ্যাকাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারকে।
ড. সালমা সিদ্দিকা ওই পত্রে উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র অথবা প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা সচিব যৌথভাবে মঞ্জুরিকৃত অর্থের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। ছাড়কৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংশোধনীসহ পিপিআর–২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি–বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। পৌর এলাকায় স্যানিটেশন সুবিধা শতভাগ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অর্থ স্যানিটেশন প্রকল্প বা স্ক্রিম বাস্তবায়নে ব্যয় করতে হবে। ছাড়কৃত অর্থ কোনো অবস্থাতেই পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) ঋণের কিস্তিও এ অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা যাবে না।
এদিকে চলতি অর্থবছরে উপজেলাগুলোর জন্য উন্নয়ন সহায়তা থোক খাতে বরাদ্দ আছে ৬৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তি বাবদ গত ৫ মার্চ দেশের ৪৯৫ উপজেলার জন্য ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। এতে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা পেয়েছে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে গত ৩ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ড. মাসুরা বেগম স্থানীয় সরকার বিভাগের চিফ একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারকে অর্থ মঞ্জুরি প্রদান পত্র করেন।
এতে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার যৌথভাবে মঞ্জুরিকৃত অর্থের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর–২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি–বিধান যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। বরাদ্দের অধীন অনুমোদিত স্কিম এবং প্রচলিত আর্থিক রীতি–নীতি অনুযায়ী ব্যয় নির্বাহ করে সংশ্লিষ্ট হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার নিকট বিল দাখিলপূর্বক সরকারি তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ আহরণ করতে হবে। এছাড়া মঞ্জুরিকৃত অর্থের অব্যয়িত অংশ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চালানযোগে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। ব্যয় বিবরণী আগামী বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রেরণ করতে হবে।
পৌরসভা : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পৌরসভাগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পৌরসভা ‘ক’, চারটি পৌরসভা ‘খ’ এবং দুইটি পৌরসভা ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে– পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান ও মীরসরাই। ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভাগুলো হচ্ছে– রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী। ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা দুটি হচ্ছে নাজিরহাট ও দোহাজারী।
ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ৯৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে পটিয়া, বারইয়ারহাট, সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, রাউজান ও মীরসরাই পৌরসভা ১৮ লাখ টাকা করে পেয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ১৭ লাখ সাড়ে ১৫ হাজার টাকা করে রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি ও বোয়ালখালী পৌরসভা পেয়েছে ৬৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এছাড়া ১৬ লাখ সাড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে নাজিরহাট ও দোহাজারী পৌরসভা পেয়েছে ৩৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
উপজেলা : চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী উপজেলার জন্য ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, আনোয়ারা উপজেলার জন্য ১৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, বাঁশখালী উপজেলার জন্য ২৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, বোয়ালখালী উপজেলার জন্য ১৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা, চন্দনাইশ উপজেলার জন্য ১৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ফটিকছড়ি উপজেলার ২৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, হাটহাজারী উপজেলার জন্য ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, লোহাগাড়া উপজেলার জন্য ১৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মীরসরাই উপজেলার জন্য ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা, পটিয়া উপজেলার জন্য ২৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জন্য ২৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা, রাউজান উপজেলার জন্য ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সন্দ্বীপ উপজেলার জন্য ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সাতকানিয়া উপজেলার জন্য ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার জন্য ২৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ছাড় করা হয়েছে।












