পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে মানুষকেই সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মানুষের আচার আচরণ, চিন্তা চেতনা, রুচিবোধ ও মননশীলতার কারণেই অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষ আলাদা। প্রগতি প্রযুক্তির হাত ধরে বিশ্ব আজ এগিয়ে গেছে বহুদূর। শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে সমাজ থেকে অনেকাংশেই দূর হয়েছে কুসংস্কার ও অযৌক্তিক প্রথা। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারীরাও ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছে, শিক্ষার আলোয় নিজেকে করেছে আলোকিত। কর্মদক্ষতায় সফলও হচ্ছে বহু নারী। কিন্তু তবুও পাল্টে দিতে পারেনি তথাকথিত সমাজের কিছু অযাচিত রীতিনীতি। আজও নারীপুরুষের ভেদাভেদ করা হয় পরিবার তথা সমাজের বিভিন্ন স্তরে।
জানি, পুরুষ জন্মদাতা। পুরুষই ভ্রাতা, পুত্র আবার জীবন পথে প্রাণপ্রিয় সহযাত্রী। যুগে যুগে পুরুষই নারীর প্রেমে নারীকে ভালোবেসে অপ্সরীদের সাথে তুলনা করে কবিতার পঙক্তিতে সাজিয়েছে। মন্দিরে মন্দিরেও পূজায় আরতিতে নারীই পুষ্পার্ঘ অন্নপূর্ণা দেবী। নারীও পুরুষের প্রেম ভালোবাসায় জগৎ ভুলে শুধু প্রিয় মানুষটির চাওয়া পাওয়ায় হৃদয়ের সবটুকু মায়ামমতায় নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে। তবুও দিনশেষে তাকে কেবলই একাকীত্বের গ্লানি সইতে হয়। কারণ সে নারী।
আজও সংসারের স্বার্থে নারীকেই তার ক্যারিয়ার ত্যাগ করতে হয়। আজও মেয়েজামাইকে আমরা যে চোখে বা আদরে সমাদর করি, তা ছেলের বৌয়ের ব্যাপারে ভাবতেই পারি না। নারী আন্দোলনের শত বছর পেরিয়ে এসে আজও নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেনি। আজও নারীকে নিজের ইচ্ছে, স্বপ্ন ও আশাকে বলি দিতে হয় সংসার, স্বামীসন্তান ও সমাজের কথা ভেবে। পুরুষের রক্তচক্ষু শাসনে, সংস্কারের বেড়ি পায়ে কতশত নারী আজও কেবল নিভৃতেই কাঁদে। তবুও আমরা আশাবাদী, হয়তো একদিন নারীকে কেবল নারী না ভেবে মানুষ ভাবা হবে। কারণ আজকের যুগে নারীদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলছে বহু শিক্ষিত সুশীল পুরুষ। হয়তো সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয় যেদিন নারীর মনের মূল্য দিয়ে নারীর প্রাপ্ত অধিকারটুকু সম্মানের সাথেই তাকে বুঝিয়ে দিতে কেউই কুণ্ঠিত হবে না। সেই সুদিনের প্রতীক্ষায় মানুষ হয়েও আমরা কেবল নারী হয়ে বাঁচি!