টানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় শহর। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তাতে নাকাল হন চট্টগ্রাম নগরবাসী। চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে, কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে আসছিলাম আমরা নগরবাসী। তবে আশ্বাস শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পুরো নগরী। এবার নতুন করে আশ্বাস এসেছে। তাতে নগরবাসী খুবই আনন্দিত। গত ১৩ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে ৩১ মার্চের পূর্বে প্রকল্পের আওতায় খালে চলমান রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজের সব উপকরণ সরিয়ে ফেলা হবে। এরপর বর্ষার আগে খালগুলো খনন ও পরিষ্কার করা হবে। তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগামী বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালীন প্রাক্প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা এই আশ্বাস দেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি বাস্তবায়নের কাজ করছে। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এবং অন্যটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সভায় মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, সংশোধিত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এই প্রকল্পের মেজর কম্পোনেন্ট (প্রধান উপাদান) হচ্ছে খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা। প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের মধ্যে ২০টি খালের পাড়ে শতভাগ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ করে ফেলেছি। পুরো প্রকল্পের ভিত্তিতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের হার ৭৫ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণে কিছুটা জটিলতা থাকায় সিলট্র্যাপের কাজ আশানুরূপ করতে পারিনি। কিন্তু আপদকালীন সিলট্র্যাপে ম্যানেজ করে ফেলেছি। ৪৫টি ব্রিজের ৩৭টি এবং ৫৮টি কালভার্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পের ভৌত অগগ্রতি আশানুরূপ। যেহেতু ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় আছে, আশা করি এর আগেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সভায় উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পের কর্মকর্তা মেজর সুজা উদ্দিন পাঠন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রকল্পের বিপরীতে ২৮০ কোটি টাকা পেয়েছি। বাজেট স্বল্পতার মধ্যেও প্রকল্পভুক্ত চারটি রেগুলেটরের কাজ শেষ হয়েছে। আরো ১০টির কাজ এ বছর শেষ হবে।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় সীমাবদ্ধতা অর্থ বরাদ্দ। অনেক ঠিকাদার কাজ করছেন। তাদের আমরা বিল পরিশোধ করতে পারছি না। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। যদি ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে নদীর পাশে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল এবং রেগুলেটর নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা গৃহীত সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প। অবশ্য মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল নগরবাসী এখনো ভোগ করতে পারছে না।
জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখগাথা হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী কিংবা অল্প বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে, এই নিয়তি একপ্রকার মেনে নিয়েছে নগরবাসী। এমনকি বৃষ্টি না থাকলেও অনেক সময় জোয়ারের পানিতেও ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার, হাসপাতালসহ বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখানে নৈমিত্তিক।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে যে রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উপকার হবে, ঠিক সে রকম পদক্ষেপ নিতে হবে। আর্থিক সমস্যা বা বরাদ্দ বাড়ানো কমানো নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে নারাজ। কারণ সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখা গেছে ইতোপূর্বে। আমরা আশা করবো, এবার প্রকল্প বাস্তবায়নকারীর কাছ থেকে যে আশ্বাস পাওয়া গেছে, তার বাস্তবায়ন হবে অচিরেই। নগরবাসী সত্যিই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায়।