বনের নীরবতা ভেঙে…

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | শনিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছি; তুমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছো, হয়তো হাজার বছর পরে, মাঘের নীল আকাশে, সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো, আমাদের মনে হবে হাজার হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়তে চেয়েছিলাম।’ বনের নীরবতা ভেঙে উড়ে বেড়ানো হরিয়াল দেখে নিসর্গপ্রেমীদের মনে জীবনানন্দ দাশের এমন পক্তিমালা ভেসে উঠতে পারে। খাগড়াছড়িতে একাধিকবার হরিয়ালের দেখা পেয়েছিলাম। বিশেষত বট বৃক্ষের ফল এদের খুব পছন্দ। বসন্তে বট ফল খেতে আসা হরিয়ালের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে বন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন বটবৃক্ষ, কমলছড়ি সংলগ্ন পাড়া বন, খাগড়াছড়ি দীঘিনালা সড়কসহ একাধিক স্থানে এই পাখির দর্শন পাওয়া যায়। এরা আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এদের প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। তবে বসন্তে হরিয়াল বেশি দেখা যায়। হরিয়াল পাখি হরিতাল নামেও পরিচিত।

হলুদ পায়ের কারণে এরা হলদে পা হরিয়াল হিসেবে পরিচিত, আকারে কবুতরের মতো। লম্বা প্রায় ৩৩ সে.মি। এদের দেহ হলদে সবুজ। মাথার রং ছাই বর্ণের। এদের চঞ্চু হলুদ, গলা ও বুক হলদে। লেজ ও ডানার প্রান্ত কালো। প্রকৃতিপ্রেমীদের ধারণা ক্রমশ কমে যাচ্ছে হলদে পা হরিয়াল এর সংখ্যা। শিকারের কারণে বিপন্ন হচ্ছে হরিয়াল।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার গণেশ ত্রিপুরা নামে সাবেক এক ইউপি সদস্য জানান, শিকারের কারণে অনেক পাখিসহ বন্যপ্রাণীর জীবন হুমকির মুখোমুখী। এদের মধ্যে ঘুঘু, হিল ময়না, হরিয়াল অন্যতম। পাহাড়ে এখনো পর্যাপ্ত হরিয়াল রয়েছে, তবে সংখ্যা আগের তুলনায় কম মনে হয়। প্রায়শ শিকারীরা পাখি শিকার করে নিয়ে যায়।

মহালছড়ি মুবাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামে সব ধরনের পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করেছি। বছরের শুষ্ক মৌসুমে বট ফল খেতে প্রচুর পাখির আনাঘোনা হয়। পাকড়া ধনেশের মতো দুর্লভ পাখিও এখন দেখা যায়। শিকার বন্ধ হলে পাহাড় পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় হবে।

খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, পার্বত্য এলাকায় ৭ প্রজাতির হরিয়াল দেখা যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুলভ হলদে পা হরিয়াল। তবে নজরদারির অভাবে পার্বত্য এলাকায় শিকার বেড়ে যাচ্ছে। এক সময় পাহাড়ে রাজধনেশ ছিল। তা এখন আর দেখাই যায় না। শিকারের কারণে হরিয়ালদের জীবন বিপন্ন। এদের রক্ষায় শিকার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

হলদে পা হরিয়াল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন২০১২ অনুযায়ী সংরক্ষিত। খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, যে কোন বন্যপ্রাণী শিকার করলে ১ বছরের জেল ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একই অপরাধ একাধিকবার করলে ৩ বছরের জেল ও ২ লাখ জরিমানার বিধান রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমসজিদে নববীতে ইফতার রমজানে বড় প্রাপ্তি
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের ইচ্ছে পূরণ হলো না