আজ বিশ্ব ভোক্তা–অধিকার দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি’।
বিশ্ব ভোক্তা–অধিকার দিবসের ইতিহাস বেশ তাৎপর্যময় ও ঘটনাবহুল। জানা যায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ভোক্তাদের চারটি অধিকার বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন। এগুলো হল– নিরাপত্তার অধিকার, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার। দিনটি ছিল ১৫ মার্চ ১৯৬২। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো ৮টি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করে। কেনেডি’র ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পালন করা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আছে। তারা বহুদিন থেকেই এধরনের আইন বাস্তবায়নের সুফল পেয়ে আসছে। নাগরিকদের ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়ে থাকে। একটি কার্যকর ভোক্তা আইনের ফলে সেসব দেশে জনস্বার্থ তথা ভোক্তা অধিকার আজ একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়।
কলামিস্ট অমিত বণিক লিখেছেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকই ভোক্তা। একজন ভোক্তা হিসেবে রয়েছে তার ‘ভোক্তা অধিকার’। কিন্তু ভোক্তার অধিকার কী, প্রতারিত হলে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, তা জানেনই না ভোক্তা নিজে। সময়ে অসময়ে আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি দেশের খুচরা বাজারগুলোতে। আবার কখনো কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কিনেও বিড়ম্বিত হই, পণ্য ফিরত দিতে জড়াতে হয় অনেক বাক–বিতর্কে। নিরাপদ এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারাটা ভোক্তার অধিকার এবং তা আইন দ্বারা সংরক্ষিত। বিক্রেতারা যাতে কোনোভাবেই ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে বা ঠকাতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে সংসদ কর্তৃক গৃহীত ‘ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ ২০০৯’ আইনটি ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে এটা সত্য যে, আইনটি প্রণয়নের ফলে জনগণ এর সুফল কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প–বিস্তর হলেও পেয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগের থেকে অনেক সতর্ক হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচারের কারণে এই আইনের প্রয়োগ ঘটেছে, এটা কিছুটা চোখে পড়েছে। এর মূলে রয়েছে আইনটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ।
আমাদের দেশেও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অধিকার রক্ষায় ২০০৯ সালে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তার প্রয়োগ নিয়ে নানা কথা আছে। আইন থাকলেও আইনের বাস্তবায়ন না হওয়াতে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ। উন্নত বিশ্বে ‘ভোক্তা অধিকার’ নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। যদিও এদেশে আইন প্রণয়নের ফলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভোক্তা তথা জনগণ ধীরে ধীরে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলোতে ভোক্তা অধিকারকে নাগরিকদের সাধারণ দেওয়ানি অধিকার হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদের দেশে নাগরিক অধিকারের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব না পাওয়াতে ভোক্তা অধিকারও প্রায়–গুরুত্বহীন একটি বিষয় হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ কথা ঠিক যে জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তৎপর আছে। ভেজাল ও মজুতদারি প্রতিরোধ, বাজার ব্যবস্থার সার্বিক তদারকির পাশাপাশি ভোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ জ্বালানির বিপণন ও বাজার ব্যবস্থাপনায়ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে জনগণ উপকৃত হবে–তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এক্ষেত্রে ভোক্তাদের প্রত্যেককেই নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নকল ও ভেজাল রোধে জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর সুফল প্রতিটি নাগরিককে পেতে হবে। ভোক্তাকে অধিকার রক্ষায় সচেতন হতে হবে। আমরা সবাই ভোক্তা, একজন ব্যবসায়ীও ভোক্তা। একজন ভোক্তার অধিকার রক্ষায় আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। ভোক্তা সচেতন হলে আইন প্রয়োগও সহজ হয়।