চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামাঞ্চলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সরব পদচারণা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডিজিটাল বিলবোর্ড, ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে প্রতিটি উপজেলা। চট্টগ্রামে চার ধাপে ১৫ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন এসব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করেছে।
নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের আস্থা অর্জনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এলাকায় সামাজিক–সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও ধর্মীয় সকল অনুষ্ঠানে কার আগে কে ছুটে যাবেন রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় খবর নিয়ে এবং আমাদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলা, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় শতাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে সরব রয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এবার কাউকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ (নৌকা) দেয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দল থেকে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের নেতাদের সাথে গণভবনে বৈঠকে এই ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রাণসঞ্চার হয়েছে। দলীয় প্রতীকবিহীন এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ঘোষণায় সাধারণ ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ। বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং দল থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্তের ফলে সর্বজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরাই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সব প্রার্থীই এলাকায় এলাকায় আসছেন, এলাকার সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। আগে দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা এলাকায় আসতো না। ভোটারদের খোঁজ–খবর নিত না। এখন ভোটের আগে থেকেই প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় এসে ঘুরে যাচ্ছেন। চায়ের দোকানে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, চা খাচ্ছেন। এমন পরিবেশ অনেক বছর দেখা যায়নি।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ৪ মে মীরসরাই উপজেলা, সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ মে তৃতীয় ধাপে আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়াখালী ও চন্দনাইশ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মে চতুর্থ ধাপে বাঁশখালী উপজেলা ও লোহাগাড়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ধাপে সাতকানিয়া এবং কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, এতোদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর নির্বাচনে দল থেকে নৌকা প্রতীক দেয়ার কারণে মনোনয়নপ্রাপ্তরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখতেন না। তারা শুধু নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন। কেন্দ্রে যোগাযোগ–তদ্বির এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কোনো রকমে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে আর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে কেউ যেতেন না। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় হাইকমান্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এখন সবার দৃষ্টি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। গত ৭ জানুয়ারি সম্পন্ন হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য চট্টগ্রামের ৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এদের মধ্যে ৫ জন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। পটিয়া, সাতকানিয়া এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। চন্দনাইশ এবং ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পরাজিত হয়েছেন। বাঁশখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে নির্বাচনে আর অংশগ্রহণ করেননি। এই ৬ উপজেলায় এখন ভাইস চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান দিয়ে চলছে।