চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ পর্যন্ত কাটাপাহাড় সড়কের দক্ষিণ পাশে হাঁটার সুবিধার্থে ২০২২ সালের ৯ মে শুরু হয় ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ। প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। কাজটি পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কাজটি ছয় মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে শেষ করার কথা থাকলেও ২২ মাসেও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত কাজের মাত্র ৩৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর। এদিকে নির্মাণাধীন কাজের ধীরগতির কারণে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ধীরগতিতে কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই হাঁটার পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া সড়কের একপাশে ইট, বালু ও কংক্রিটের স্তূপ পড়ে থাকায় একপাশ দিয়েই যেতে হচ্ছে সব যানবাহন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
সরেজমিনে দেখা যায়, চবির জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ পর্যন্ত কাটাপাহাড় সড়কের দক্ষিণ পাশে ছাউনিসহ এক হাজার ৪৭৫ ফিটের হাঁটার রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। পাকা ছাউনি তৈরির জন্য ৯৯টি পিলারের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি পিলারের ওপর ছাউনি তৈরি করতে ইটের সুরকি, সিমেন্ট ও রডের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ঢালাই দেওয়া সেই ছাদের নিচে আবার উঠানো হচ্ছে নতুন পিলার। বাকি ৬৪টি পিলার ঢালাইহীন অবস্থায় পড়ে আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, রাস্তার কাজ চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকবার এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন রকম হুমকিধমকি দিয়েছে। এছাড়া যেখানে আমাদের যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে, সেখান থেকে ধাপে ধাপে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে ৭০০ কেজির মতো রড নিয়ে গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখে ৫৪টা পিলার থেকে রডও কেটে নিয়ে গেছে। প্রথম দিন ৩৩টা পিলারের পরেরদিন ২১ পিলারের মোট ২৫২টি রডের টুকরা (১৩০০ কেজি) চুরি করে নিয়ে যায়। ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহারিত ১৪ টা জগও চুরি হয়। প্রতিটা জগের বাজার মূল্য ৪ হাজার টাকা করে। এছাড়াও চাঁদাবাজির কারণে কাজটা শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার মাঝে মাঝে পাহাড়ধস ও ভর্তি পরীক্ষার জন্যও দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাটা পাহাড়ে যানবাহনের মধ্যে চলাচলের ভোগান্তি কমাতে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন দেখতেছি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে। কাজটি যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। সেখানে তো দেখা যাচ্ছে ছাদ ঢালাইয়ের পর নতুন করে পিলার তোলা হচ্ছে। সহজেই বোঝা যায় যে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেই কাজ করতে সময় দেওয়া হয়েছে ৬ মাস কিন্তু সেই কাজ ২২ মাসেও হচ্ছে না।
এই সম্পর্কে জানতে চাইলে চবির প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোল্যা খালেদ হোসেন বলেন, এই কাজটি মূলত ২০১৪ সালের অর্থ বছরের বাজেট ছিল। কিন্তু কাজটি ২০২২ সালে করার জন্য আমরা মা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে দিয়েছি। তাদেরকে কাজ শেষ করতে ছয় মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষা পাহাড়ধসসহ নানা সমস্যার কারণে তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই আমরা তাদেরকে দুই থেকে তিনবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। এর মধ্যে যদি কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে আমরা প্রশাসনকে জানাব। পাকা ছাউনির ব্যাপারে তিনি বলেন, ছাদ যখন ঢালাই দেওয়া শুরু করছিল তখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। আমি নিজেও ছিলাম না। পরে দেখে মনে হয়েছে, কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আরেকটু মজবুত করতে পিলার বাড়িয়ে সংশোধন করার চেষ্টা করছি।