বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতা সহনীয় থাকবে

মেগা প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ, বললেন কর্মকর্তারা ৩১ মার্চের আগে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজের উপকরণ সরানো হবে বর্ষার আগে খাল খনন ও পরিষ্কার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৩ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে ৩১ মার্চের পূর্বে প্রকল্পের আওতায় খালে চলমান রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজের সব উপকরণ সরিয়ে ফেলা হবে। এরপর বর্ষার আগে খালগুলো খনন ও পরিষ্কার করা হবে। তাই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আগামী বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষাকালীন প্রাক্‌প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা এই আশ্বাস দেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান চারটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি বাস্তবায়নের কাজ করছে। এর মধ্যে মেগা প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এবং অন্যটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

সভায় মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, সংশোধিত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এই প্রকল্পের মেজর কম্পোনেন্ট (প্রধান উপাদান) হচ্ছে খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা। প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের মধ্যে ২০টি খালের পাড়ে শতভাগ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ করে ফেলেছি। পুরো প্রকল্পের ভিত্তিতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের হার ৭৫ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণে কিছুটা জটিলতা থাকায় সিলট্র্যাপের কাজ আশানুরূপ করতে পারিনি। কিন্তু আপদকালীন সিলট্র্যাপে ম্যানেজ করে ফেলেছি। ৪৫টি ব্রিজের ৩৭টি এবং ৫৮টি কালভার্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পের ভৌত অগগ্রতি আশানুরূপ। যেহেতু ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় আছে, আশা করি এর আগেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, দুই নম্বর গেট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত অংশে এবার জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। আশা করছি বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, বাকলিয়া ও চাক্তাই খালের আশেপাশে সহনীয় থাকবে।

ফেরদৌস আহমেদ বলেন, বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বিবেচনায় আমরা ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, শমশেরপাড়া, বাদুরতলা, ঘাসিয়াপাড়া, বারইপাড়া, ফুলতলা, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার ও আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ একটু বেশি দেখতে পেয়েছি। সেই প্রেক্ষিতে আমরা সিটি কর্পোরেশনকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। এই এলাকাগুলোর সংশ্লিষ্ট খালগুলোকে যদি আমরা ফুল ফ্লোয়িং অবস্থায় আনতে পারি এবং খালগুলোর সাথে সম্পৃক্ত প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি নালাগুলো যদি পরিষ্কার করতে পারি তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কিছুটা সুফল পেতে পারি।

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সাথে আমরা মিনিমাম তিনবার বসেছি। তারা তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা আমাদেরকে করেছে। আমরা তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি। তাদের সাথে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ শেষ করেছি। আমাদের প্রকল্পভুক্ত ৬টি রেগুলেটরের মধ্যে ৫টা রেগুলেটর সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে আশা করি পুরোপুরি ফাংশনাল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে কিছুক্ষণ আগেও বৈঠক করে বর্ষাকালের পরিকল্পনা করেছি। তাদের বলেছি, আগামী ৩১ মার্চের পর খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো ইক্যুইপমেন্ট থাকবে না। এরপর পুরো সময় আমরা খাল পুনঃখননের কাজে চলে যাব। বর্ষার পূর্বে যদি খালের ফুল ফ্লোয়িং ক্যাপাসিটি অর্জন করতে পারি, মির্জা, চশমা, চাক্তাই, চাক্তাই ডাইভারশন, বাকলিয়া এই কয়টা খাল যদি প্রতিবন্ধকতামুক্ত করতে পারি এবং সংলগ্ন ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখতে পারি তাহলে এবার পরিস্থিতি ভালো থাকবে।

মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা খালগুলো প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সিডিএর প্রকল্প পরিচালক আহমদ মইনুদ্দিন বলেন, মাস্টার প্ল্যানে ৭১টি খালের কথা বলা হলেও সবগুলোর অস্তিত্ব এখন নেই। ৫৭টি খাল পাওয়া যায়। আমরা ৩৬টি খাল নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করি। এর বাইরে অন্য খাল নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তবে বাকি ২১টি খাল নিয়ে সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প নিচ্ছে।

খননকৃত খালে ময়লাআবর্জনা ফেলে যারা ভরাট করে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে সিডিএর এ প্রকৌশলী বলেন, জরিমানার বিষয়টি প্রশাসনিক। এজন্য ম্যাজিস্ট্রেট দরকার। সিডিএর যে অর্ডিন্যান্স সেখানে আমাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া নেই। এটা চায়লে সিটি কর্পোরেশন পারবে। তবে যখন আমরা প্রকল্পের কাজ করি তখন কেউ ময়লা ফেললে চেষ্টা করি তাদের বিরত রাখার।

সভায় উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পের কর্মকর্তা মেজর সুজা উদ্দিন পাঠন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রকল্পের বিপরীতে ২৮০ কোটি টাকা পেয়েছি। বাজেট স্বল্পতার মধ্যেও প্রকল্পভুক্ত চারটি রেগুলেটরের কাজ শেষ হয়েছে। আরো ১০টির কাজ এ বছর শেষ হবে।

আর্থিক সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় সীমাবদ্ধতা অর্থ বরাদ্দ। অনেক ঠিকাদার কাজ করছেন। তাদের আমরা বিল পরিশোধ করতে পারছি না। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। যদি ঠিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে নদীর পাশে বন্যা প্রতিরোধক দেয়াল এবং রেগুলেটর নির্মাণ দ্রুত করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, পতেঙ্গায় বিমানবন্দরের সামনে প্রকল্পের আওতায় একটা ওয়াল নির্মাণ হচ্ছে। এটার উচ্চতা ৬ দশমিক ৬ মিটার। এটা নিয়ে একটা অবজার্ভেশন প্রায় দেওয়া হয়, দেয়ালটির জন্য নদী দেখা যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে নদী দেখতে সমস্যা হবে না। এখানে প্রকল্পের কম্পোনেন্ট রাস্তা ও ওয়াল দুটোই আছে। রাস্তাটি উঁচু করা হবে প্রায় ৬ মিটার। অর্থাৎ বাকি থাকবে মাত্র শূন্য দশমিক ৬ মিটার। হাঁটু থেকে একটু কম। তখন নদী দেখতে আর সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা গৃহীত সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প। অবশ্য মূল প্রকল্প ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। সংশোধনের পর ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাসভবন ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে
পরবর্তী নিবন্ধহাই কোর্টের আদেশ স্থগিত, রোজায় স্কুল খোলা