পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে এদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটা এমন এক ধর্মীয় উৎসব, যার সঙ্গে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীও সংশ্লিষ্ট। রোজা এলেই এখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। যানজটে অতিষ্ঠ হয় জনজীবন। বিদ্যুৎ–পানির সরবরাহ ঠিক থাকে না। গতকাল দৈনিক আজাদীতে ‘রোজার দিনগুলো সহনীয় রাখতে নানা পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রমজান আসার সাথে সাথে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এবার দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেভাগে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছোলা, চিনিসহ রমজানে ব্যবহার্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। আজাদীকে তিনি বলেন, আমরা শুধু বাজার মনিটরিং নয়, নিয়ন্ত্রণও করব। আমাদের ৪টি টিম বাজার মনিটরিং করছে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়ে এসেছি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করব। বাজারে প্রচুর পণ্যের সরবরাহ এবং মজুদ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিনি নিয়ে কিছু কারসাজির চেষ্টা করা হয়েছিল। এস আলমের সুগার মিলে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে অপরিশোধিত চিনি পুড়েছে। পরিশোধিত চিনির কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রচুর চিনি তাদের ওখানে মজুদ রয়েছে। বাজারেও প্রচুর চিনি রয়েছে। চিনি আমদানিকারক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছেও বিপুল চিনি রয়েছে। শুধু চিনি নয়, কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। তাই কাউকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফায়দা লুটতে দেওয়া হবে না। রমজানে রান্নার গ্যাসের সংকট যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ অন্য খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের যোগান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে না কমে সেদিকেও সজাগ থাকার কথা জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু সাকলায়েন। তিনি বলেন, গ্যাস সেক্টরে যাতে কোনো সংকট না হয় সেজন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। নিশ্চয় এর সুফল নগরবাসী পাবেন।
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের পরিস্থিতি বর্তমানে সন্তোষজনক উল্লেখ করে পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের পরিস্থিতি খুবই ভালো। তবে গরম বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে চাহিদা। চাহিদা বাড়ার ফলে আমরা একটু চাপে পড়ব। তবে রমজানে ইফতার, তারাবি কিংবা সেহেরিতে নগরবাসী যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান সেদিকে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
আসল কথা হলো, ইফতার, তারাবির নামাজ ও সেহেরির সময়ে কোনোভাবেই লোডশেডিং করা যাবে না। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার পরীক্ষা করে প্রতিস্থাপন এবং স্টোরে পর্যাপ্ত ট্রান্সফরমার মজুদ রাখতে হবে। যেভাবেই হোক উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেবল তেল, গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভর করলে চলবে না; জলবিদ্যুৎ, বায়ুকল, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে।
তুলনামূলক কম গুরুত্বর্পূণ খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। তবে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা যতই আশ্বাস দিন না কেন, রমজানেও লোডশেডিং হতে পারে। তবে সেটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প উপায় বের করা জরুরি। তবে সাধারণ মানুষকেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও মিতব্যয়ী হওয়া দরকার। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ হলেই তা সবার জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটারিং জোরদার করতে হবে। রোজা এলেই যে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে, সেই প্রথার অবসান ঘটাতে হবে।