দায়িত্ব পালনের তিন বছরে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন সুধীজনরা। তারা মেয়রের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ের ওপরও জোর দেন। এছাড়া সমন্বয় নিশ্চিতে ১৯৮২ সালের স্থানীয় সরকার অর্ডিন্যান্স বাস্তবায়ন করার দাবি ওঠে। যে বাড়ির সামনে ময়লা–আবর্জনা ফেলবে তাকে জরিমানা করার পরামর্শ দেন।
গতকাল দুপুুরে চসিকের বর্তমান পর্ষদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন সুধীজনরা। নগরের পাঁচলাইশে একটি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সমাবেশে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেয়রকে সাকসেস করতে হলে ১৯৮২ সালের স্থানীয় সরকার অর্ডিন্যান্স বাস্তবায়ন করতে হবে, যা ১৯৯৩ সালে বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর আছে। আমাদের সময়ে তিন প্রকার কাউন্সিলর ছিল। আরেকটি ছিল অফিসিয়াল কাউন্সিলর। অফিসিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে ছিলেন বন্দর, সিডিএ ও ওয়াসার চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রধানরা। তাদের সবাইকে প্রতি মাসে কর্পোরেশনের সভায় এসে জবাবদিহি করতে হতো। সেটা বহাল করুন। না হলে সমন্বয়ের অভাবে কোনো কাজের সুফল মিলবে না। অন্যথায় মেয়র ঠুঁটো জগন্নাথ। কেউ উনার কাছে জবাবদিহি করবে না, শুধু ময়লা পরিষ্কার করবে, এভাবে হবে না। যদি তার ক্ষমতা না দেন, তাহলে কেন নির্বাচন করবেন? আপনি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে অফিসিয়াল কাউন্সিলর পদ পুনর্বহাল করুন।
তিনি বলেন, ঢাকায় মার্কেট চালায় সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রামে চালায় সিডিএ। অবিলম্বে সব মার্কেট সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক। তিনি স্থানীয় সরকারের ওপর কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন মন্ত্রীকে।
চট্টগ্রাম–১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের গত তিন বছরের উন্নয়নে আমি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। যেসব কাজ যেন কল্যাণে আসে সেজন্য সাধারণ মানুষের অনেক পর্যবেক্ষণ থাকে, সেগুলো শেয়ার করুন। মেয়র মহোদয় ক্লোজলি মনিটর করুন। অনেক ত্রুটির কারণে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরাই সেটা আপনাকে বলতে পারবে। আপনার ডিপার্টমেন্টের প্রকৌশলীরা পরিকল্পনা একটি করে দিল, সেটার জন্য কী সুবিধা–অসুবিধা হচ্ছে তা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে খেলার মাঠ নেই। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুধুমাত্র রাস্তাঘাট, নালা–নর্দমা, কালভার্ট করলে হবে না। স্মার্ট জেনারেশন তৈরি করতে হবে। এজন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চাসহ প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
লতিফ বলেন, পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। রাস্তা–নর্দমা বানিয়ে দিয়ে আসবেন আর সেটা ডাস্টবিনের কাজ করবে তা হয় না। তাই যার বাড়ির সামনে ময়লা থাকবে তাকে জরিমানা করতে হবে। কারণ আমার আঙিনা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব আমার। কর্ণফুলীতে প্রতিদিন ৪০০ টন বর্জ্য পড়ছে। নাব্যতা হারাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্যের কারণে এত বড় নদী মরে যাবে তা আমরা মেনে নিতে পারি না। নর্দমা ময়লায় পরিপূর্ণ থাকবে, তা হয় না।
তিনি বলেন, সন্তানদের ফুটপাতে হাঁটার অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত করতে পারে না। কিছুদিন আগে ফুটপাতগুলো চাঁদাবাজরা দখলে নিয়েছিল। সারাজীবন যারা চাঁদার উপর নির্ভর করেছে তাদের থেকে শহরকে রক্ষা করতে হলে মেয়রকে আরো শক্ত হতে হবে। নিজস্ব আনসার দিয়ে সারক্ষণ পাহারা দিতে হবে। না হলে চাঁদাবাজরা আবার গিয়ে বসে যাবে।
চট্টগ্রাম–১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, চট্টগ্রাম শহরকে মানুষের জন্য উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে মেয়র ইতোমধ্যে যে ভূৃমিকা রেখেছেন তার প্রশংসা করছেন সবাই। যানজটমুক্ত শহর ও যত্রতত্র হকার বসা রোধে মেয়রের উদ্যোগ নগরবাসীর প্রশংসা পেয়েছে ইতিমধ্যে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সব দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্যদেরও মানসিকতার পরিবর্তন এখন প্রয়োজন। শহরকে আধুনিক ও বাসযোগ্য করতে হলে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে।
চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণে গত তিন বছর সিটি মেয়র চেষ্টা করেছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে আমরা যারা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি তারা আগামী দুই বছর মেয়রের পাশে থেকে মানুষের চাওয়া–পাওয়া পূরণ করব। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের আকাঙ্ক্ষা মন্ত্রী মহোদয় ভালো করে জানেন। চট্টগ্রামের মানুষ যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রাম চায়। মেয়র মহোদয় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল বলেন, শহরের মালিক সিটি কর্পোরেশন। রাস্তা বড় হলে লাভ নেই। ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক থাকতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ শতাংশ সিটি কর্পোরেশনকে দেয়ার দাবি জানাই।
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, অন্য যে কোনো নগরের চেয়ে আলাদা চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে শহরে নানা চাপ বাড়ছে। আমদানি–রপ্তানির কারণে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। অথচ বন্দরের আয় থেকে কর্পোরেশন কিছু পাচ্ছে না। বন্দরের কারণে বাড়তি জাতীয় লোড নিতে হয় চট্টগ্রামকে নিতে হয়। তাই বরাদ্দের ক্ষেত্রে দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে চট্টগ্রামের তুলনা করলে চলবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শের আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি শহর ও গ্রামের উন্নয়ন চান। সরকারি কর্মকর্তাদের অফিস টাইম আছে, জনপ্রতিনিধির নেই। তারা সার্বক্ষণিক জনগণের জন্য কাজ করেন।
চসিকের প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন বলেন, চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগর করতে হলে রাস্তার উন্নয়ন দরকার। রাস্তা বড় করতে হবে, এজন্য জমি অধিগ্রহণ দরকার। সে ক্ষমতা কর্পোরেশনের নাই।
প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পও রয়েছে।
প্যানেল মেয়র আফরোজা জহুর বলেন, বিগত তিন বছর মেয়র মহোদয় স্মার্ট নগর গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন। অনেক কাজ দৃশ্যমান, কিছু চলমান আছে।