বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কোয়ার্টারলি লেবার ফোর্স সার্ভে–২০২৩–এর চতুর্থ কোয়ার্টারের (অক্টোবর–ডিসেম্বর) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাসের হিসাবে দেশে বেকার সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজারে। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী ৭ লাখ ৮০ হাজার। আর ২০২২ সালের একই সময়ে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ সাড়ে ১৬ লাখ এবং নারী বেকার ৬ লাখ ৬০ হাজার। তবে ২০২৩ সালের বার্ষিক হিসাবে সাময়িকভাবে বেকার সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের বার্ষিক হিসাবে বেকার দাঁড়াতে পারে ২৪ লাখ ৭০ হাজার। ২০২২ সালের চূড়ান্ত হিসাবে এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। শতাংশ অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর–তিন মাসে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ২০ শতাংশ, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে বার্ষিক বেকার ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা ২০২২ সালের চূড়ান্ত হিসাবে ছিল ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিবিএস–এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের চতুর্থ কেয়ার্টারের হিসাব অনুযায়ী শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মোট জনগোষ্ঠী হলো ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার এবং নারী ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার। ২০২২ সালের একই কোয়ার্টারের হিসাব অনুযায়ী শ্রমশক্তির বাইরে ছিল ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার এবং নারী ৩ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার। বার্ষিক হিসাবেও এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৩ সালের সাময়িক হিসাবে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী হচ্ছে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালের চূড়ান্ত হিসাবে এই সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমানের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। তিনি বলেন, পুরো জনগোষ্ঠীকে বেকার বলা যাবে না। কেননা আইএলও–এর গাইডলাইন অনুযায়ী যারা ৭ দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন; পাশাপাশি বিগত ৩০ দিনে বেতন/মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন–তাদেরকেই বেকার বলা হয়। আর শ্রমশক্তির বাইরে থাকা অর্থ হচ্ছে–যারা সাধারণত ছাত্র, অসুস্থ, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক–এমন গৃহিণীরা। এজন্য দুটিকে এক করে বেকার বলা যায় না। তবে কর্মের বাইরে আছেন, এটা বলা যায়। এ সংখ্যাটা অনেক বেশি। এটি কমিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মানুষের মধ্যে যারা কাজেও নেই, শিক্ষায়ও নেই আবার প্রশিক্ষণেও নেই, তারাও আছেন। এছাড়া ভবঘুরে, পিতামাতার আদরের সন্তান, অলস শ্রেণির মানুষও রয়েছে এ অংশে।
বাংলাদেশ ক্রমশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশের দিকে হাঁটছে। তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এটি উন্নয়নের প্রাথমিক ভিত্তি। এর অংশ হিসেবে প্রচুর কল–কারখানা হবে, অবকাঠামো হবে, সুরম্য মার্কেট, শপিং মল হবে, হোটেল–মোটেল হাসপাতাল–বিনোদনকেন্দ্র হবে। প্রচুর কায়িক শ্রমনির্ভর বা ক্লারিক্যাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু আমাদের কর্মের শ্রেণি–বিভাজিত দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার লোকজন এসব মানের কাজ করতে আগ্রহী নয়। তারা চায় এক্সিকিউটিভ ধরনের চাকরি। সেটি হয়তো পাওয়া যাবে, তবে দেশ উন্নত রাষ্ট্রের মহাসড়কে উঠে গেলে তখন। এখন চলবে কনস্ট্রাকশন, তখন লাগবে মেইনটেন্যান্স।
আসলে আমাদের দেশে কাজের চাহিদা আছে, কিন্তু স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ লোক নেই। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে এক ধরনের ফারাক আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। যেসব কাজের চাহিদা আছে, সেসব ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সরকার দেশে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায়। এ জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হিসেবে নামকরণ করে প্রশংসার কাজ করেছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের ধারণা।