সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথধাম ও মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে শিব চতুর্দশী মেলা শুরু হয়েছে। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথধামে গতকাল শুক্রবার মেলার শিবরাত্রীতে বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রীর ঢল নামে এবং লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে মন্দির সড়ক হয়ে চন্দ্রনাথ ধামের পাদদেশ পর্যন্ত। গতকাল রাত ৮টা ৩৫ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে শুরু হয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে শিব চতুর্দশী তিথি। তিথির শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সনাতনী পূণ্যর্থীরা জাগতিক সকল পাপ মোছনে ও পুণ্য লাভের আশায় ব্যাসকুণ্ডে স্নান করেন। গতকাল ব্যাসকুণ্ডে স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা দল বেঁধে দেবাদিদেব মহাদেবের সান্নিধ্য লাভের আশায় উঠতে থাকেন প্রায় ১২শ ফুট উপরে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দিরে। চন্দ্রনাথ মন্দিরে উঠতে অন্তত ৪০ জন তীর্থযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ড কলেজ রোড় এলাকা থেকে চন্দ্রনাথধাম পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে পুণ্যার্থীর পদচারণায়। মেলা প্রাঙ্গণে মেলা কমিটি ও সীতাকুণ্ড স্রাইন এস্টেট প্রায় পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মেলা প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা থাকলেও পকেটমারের উৎপাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ষাটোর্ধ বৃদ্ধা শোভা রানী ও রামগতি থেকে আসা বৃদ্ধা মায়া রানী সূত্রধর বলেন, জীবনের একটা বড় ইচ্ছা ছিল সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলায় আসব। অবশেষে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে পথে পথে শুধু হয়রানির শিকার হলাম। গাড়ি থেকে নেমে একটি ডাব কিনেছি ২শ টাকা দিয়ে। পূজার জন্য প্লাস্টিকের শাখা কিনলাম জোড়া ৪০০ টাকায় যা বাজারে খুব বেশি হলে ১৫০ টাকা হতে পারে। এভাবে ব্যাসকুন্ডের পাড়ে পুরোহিতের কাছে গেলাম কিছু ধর্মীয় কাজ করতে। তিনি দাবি করেন ৫০০ টাকা। সবখানেই এরকম অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা দিশেহারা। অন্যদিকে তীর্থ যাত্রী মায়া রানী জানান, এ মেলায় এসে তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।
সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা জানান, তীর্থযাত্রীরা যেন ভালোভাবে পূজা–অর্চনা করতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় ৪ শতাধিক পুলিশ সদস্য মেলায় নিয়োজিত আছে।
মহেশখালী : শিব চতুর্দশী মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার পূজারী আর পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দির প্রাঙ্গণ। এ উপলক্ষে মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশে বসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আদিনাথ মন্দিরে শিবকে স্নান করানোর জন্য ভিড় করতে থাকেন হাজারো নর–নারী। ডাব, দুধ দিয়ে তারা মহাদেব শিবকে স্নান করানোর মধ্য দিয়ে নিজেদের মনোবাসনা পূর্ণ করেন। স্নান করানোর পাশাপাশি দেশ–বিদেশের তীর্থ যাত্রীরা ছাগল, কবুতরসহ মানতের বিভিন্ন জিনিসপত্র ও প্রাণী নিয়ে এসে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা সম্পাদন করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, মিয়ানমার থেকে আগত শত শত পূজারি এসে সমবেত হন বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষা মৈনাক পাহাড়ের চূড়ার আদিনাথ মন্দিরে।
এদিকে প্রতিবারের মতোই নৌপথে অর্থাৎ কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালী যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হাজার হাজার তীর্থযাত্রী। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তীর্থযাত্রীদের হয়রানি আর দুর্ভোগ কমাতে এবার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আদিনাথ মন্দিরের পুরোহিত রাহুল চক্রবর্তী জানান, ৮ মার্চ শুক্রবার রাত ৮টা ২৯ মিনিট থেকে শিব দর্শনের লগ্ন শুরু হয়ে চলবে ৯ মার্চ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিট ৯ সেকেন্ড পর্যন্ত।