সাতকানিয়ায় নতুন ফসল গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরপর কয়েক বছর পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আমন ধান কাটার পর সেচের অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে গম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় মহাখুশি কৃষকরা। এতে কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এলাকার কৃষকরা। আমন কাটার পর শুধুমাত্র সেচের অভাবে অনাবাদি থাকা উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিগুলো এখন গম চাষের আওতায় আনা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, যেসব জমিতে সরিষা, ফেলন ও মৌসুমী শাক–সবজি চাষ করে সেসব জমিতে গম চাষ করে অধিক লাভের সুযোগ রয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, এখানকার মাটি গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা গমের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, এবারে রবি প্রণোদনা কর্মসূচি ও রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া, কেঁওচিয়া ও মাদার্শা এলাকার ২০ জন কৃষককে উচ্চ ফলনশীল জাতের গম বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এবারে প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, গম এ অঞ্চলের জন্য নতুন একটি ফসল। এখানকার কৃষকদের মধ্যে গম চাষ সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নাই। রবি প্রণোদনা ও রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় গত দুই বছর ধরে কিছু কৃষক গম চাষ করছে। তারা ভালো ফলন পেয়েছে। এবারও উপজেলার সোনাকানিয়া, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চাষে কয়েকজন কৃষক বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলে কৃষকরা গম নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি আরো জানান, এখানকার আবহাওয়া ও মাটি গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। গমের জীবনকাল কম হওয়ায় শীতের শুরুতে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। তখন পতিত অনেক জমি চাষের আওতায় চলে আসবে।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষকদেরকে যে জাতের গম বীজ দেয়া হয়েছে এগুলোর জীবনকাল মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ দিন। আমন ধান কাটার পর সেচের অভাবে যেসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকে সেসব জমিতে গম চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এছাড়া যে জমিগুলোতে ফেলন, সরিষাসহ নানা রকম শাক সবজি চাষ করে সেই গুলোতে গম চাষ করলে অধিক লাভবান হবেন। তবে ২–৩টা সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জানান, বীজ রোপনের ১৭–২১ দিনের মধ্যে একটি সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। গমের শীষ বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় সেচ এবং গমের দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (ফুল থেকে ফলে রূপান্তর হওয়ার সময়) তৃতীয় সেচ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে গমের ভালো ফলন মিলবে।
সাতকানিয়া পৌরসভার উত্তর চরপাড়ার কৃষক আরিফ কাদের চৌধুরী জানান, গত বছর আমি ৪ শতক জমিতে গম চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো পাওয়ায় এবারে ২০ শতক জমিতে চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ প্রদান করেছে। ইতিমধ্যে গমে শীষ আসছে। এবারও ভালো ফলন পাবো বলে আশা করছি।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ছোট হাতিয়া কালা মিয়ার পাড়ার কৃষক আবু হানিফ জানান, এবার আমি প্রথমবারের মতো ২ কানি জমিতে গম চাষ করেছি। সরকারিভাবে বীজ ও সার প্রদান করেছে। এখন গমের শীষ বের হয়েছে। কিছু কিছু গাছে গমের ফুল ফলে রূপান্তরিত হয়েছে। সতেজ গমের শীষ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে ভালো ফলন পাব। তিনি জানান, সোনাইছড়ি খালের মুখে অবৈধভাবে দেয়া বাঁধ কেটে দেয়ায় স্লুইচ গেইট ভেঙে যাওয়ার ফলে সেচ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। এখন গেইট এলাকায় বাঁধ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে যথাসময়ে শেষ সেচ দিতে পারব।
সোনাকানিয়ার কুতুব পাড়ার কৃষক মো. এনাম উদ্দিন জানান, আমি গত বছর ১ কানি জমিতে গম চাষ করেছিলাম। ফলন খুব ভালো হয়েছিল। ফলে এবছর আড়াই কানি জমিতে গম চাষ করেছি। খেতের এখন যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে এবারেও ভালো ফলন পাব। আগামী বছর থেকে আরো অধিক জমিতে গম চাষের চিন্তা রয়েছে।
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া বড় মিয়া পাড়ার কৃষক মোহাম্মদ মামুন জানান, আমি এবারে প্রথম বারের মতো ১০ গন্ডা জমিতে গম চাষ করেছি। ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। আশপাশের জমিতে করা অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমে অধিক লাভ হবে। তবে সঠিক সময়ে সেচ নিশ্চিত করতে হবে।
সোনাকানিয়ার তাঁতী পাড়ার কৃষক মো. ছাদেক জানান, সরকারিভাবে বীজ ও সার পেয়ে এবারে প্রথম বারের মতো ১ কানি জমিতে গম চাষ করেছি। কিন্তু সোনাইছড়ি খালের মুখে অবৈধভাবে দেয়া বাঁধ বন বিভাগ হঠাৎ কেটে দেয়ায় সৃষ্ট পানির ঢলে পুরো গম খেত নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো গম খেত কাদা মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে।