পেঁচারদ্বীপে প্যারাবন উজাড় করে রাতারাতি কটেজ তৈরি

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচারদ্বীপ এলাকায় সাগরতীর ঘেঁষে ফের প্যারাবন উজাড় করে রাতারাতি কটেজ তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সরেজমিনে দেখা যায়, রামু খুনিয়াপালং পেঁচারদ্বীপ এলাকায় পর্যায়ক্রমে প্যারাবন ধ্বংস করে ৫টি কটেজ তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের রেজু নদীর একটি অংশ ভরাট হয়ে প্যারাবন সৃজিত হয়। এ প্যারাবনে বক, কুয়েলসহ নানা প্রজাতির পাখি ও বানরের আবাসস্থল ছিল। স্থানীয়রা এ প্যারাবন থেকে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবন যাপন করতো। মেরিনড্রাইভ সড়ক হওয়ার পর ওই এলাকার জমির মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে কিছু প্রভাবশালী সরকারি খাস জমি এসব প্যারাবন উজাড় করে দখল করতে শুরু করে। প্যারাবনের পূর্ব পাশে বেশ কয়টি বসতি আছে। একটিতে বসবাসকারী বেলাল বলেন, কয়েক বছর আগেও এই প্যারাবনে মাছ শিকার করতেন তিনি। এখন দখলদাররা একে একে গাছগুলো কেটে প্যারাবন দখল করছে। নিজেদেরও উচ্ছেদ করার হুমকি দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই জমিগুলো পেঁচার দ্বীপ ১নং খাস খতিয়ানের ৫৭১ দাগের। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগ এবং তার ছোট ভাই শাহীনের কাছ থেকে অর্থিক সুবিধা নিয়ে প্যারাবন পর্যায়ক্রমে দখল করে কটেজ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) সদস্য নুরুল আলম নুরু এবং সাবেক (ইউপি) সদস্য কামাল আহমদ ওরফে কামাল মেম্বারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন। অভিযোগ অস্বীকার করে কামাল আহমদ বলেন, মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগ এই কটেজগুলো করছে। এসব বিষয়ে আর বেশি কিছু জানি না, তিনি সোহাগের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে নুরুল আলম নুরু বলেন, এই কটেজ খতিয়ানভুক্ত জমিতে করা হচ্ছে। পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরে তিনি খাস জমি হলেও প্যারাবন ছিল না বলে দাবি করেন। মারমেইড রিসোর্টের জমি বলেও দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, পেঁচারদ্বীপের এমন কোন জায়গায় খালি নেই যা মারমেইড কিনে নাই।

এ বিষয়ে মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে মারমেইড বিচ রিসোর্টের ম্যানেজার জানান, ‘ছুটি থেকে ফিরে তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা করিয়ে দিবেন মালিকের সাথে, এর আগে মালিকের সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাবে না।

মারমেইড বিচ রিসোর্টের মালিক সোহাগের ছোট ভাই মুননেস্ট এর মালিক শাহীন জানান, কটেজগুলো আমি করছি না। নুরু মেম্বার এবং কামাল মেম্বার করছেন। আমাকে জড়ানো হচ্ছে। এই জায়গা দুই ইউপি সদস্যের।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত নই, জানার পর শিগগিরই ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠানো হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের প্যারাবনগুলো এখন ভূমিদস্যুদের প্রধান টার্গেট। উপকূলের বেস্টনি হিসেবে পরিচিত প্যারাবন উন্নয়ন এবং পর্যটনের নাম ব্যবহার করে হোটেল, কটেজ নির্মাণের জন্য খুব বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এসব ভূমিদস্যুদের চিহ্নিত করা উচিত।

এ বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নিরুপম মজুমদার জানান, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সার্ভেয়ার দিয়ে মাপঝোঁক করার পর খাসজমি হলে উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান ইউএনও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীর বিএনপি নেতা মাহবুবুল আলম কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধপেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ভারতের