খেলাপি বা মন্দ ঋণ অবলোপনের সময় এক বছর কমিয়ে দুই বছর নির্ধারণ করে নতুন নীতিমালা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; যেখানে সামনের দিনে অবলোপন করা ঋণ ‘বিক্রির’ সুযোগও রাখা হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রকাশ করা নতুন এ সার্কুলারে একই সঙ্গে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর নিয়োগ বা মেয়াদ নবায়নের ক্ষেত্রে অবলোপন করা (রাইট অফ) খেলাপি হিসেবে পরিচিত মন্দ বা ক্ষতিজনিত ঋণ আদায় সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী অর্ন্তভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নীতিমালা জারির ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রধান কার্যালয়ে ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে আগের অবলোপন করা ঋণ আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ঋণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ হচ্ছে মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা। এতে সার্বিকভাবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো যায়। এতে ওই ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ঋণ আদায় হলে তা ব্যাংকের আয় হিসেবে দেখানো যায়।
নতুন এ নীতিমালায় অবলোপনযোগ্য এসব ঋণ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে বিক্রির অনুমোদন দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কার্যকর হলে ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণপূর্বক অবলোপনকৃত ঋণ বিক্রয় করা যাবে। তবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের এখনও আইনি ভিত্তি তৈরি হয়নি। আইনটির খসড়া জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইন পাস হলে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের সুযোগ তৈরি হবে। তখন এসব কোম্পানির কাছে অবলোপন করা ঋণ বিক্রি করা যাবে। খেলাপি ঋণ বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করার নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতদিন তিন বছর পার হওয়ার পর খেলাপি হওয়া মন্দ মানের ঋণ অবলোপন করতে পারত ব্যাংক। এ সময় একবছর কমানো হয়েছে নতুন নীতিমালায়। সার্কুলারে বলা হয়েছে, যে সকল ঋণ হিসাব একাদিক্রমে দুই বছর মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত রয়েছে সে সকল ঋণ হিসাব অবলোপন করা যাবে। ঋণের শ্রেণিমান যাই হোক না কেন, কোনো মৃত ব্যক্তির নিজ নামে অথবা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণ হিসাব ব্যাংক স্বীয় বিবেচনায় অবলোপন করতে পারবে। তবে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরি রয়েছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে। ঋণ অবলোপনের আগে মামলা দায়ের ও অবলোপনের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে পাঁচ লাখ টাকার সমপারিমাণ খেলাপি ঋণ অবলোপনে মামলা না করার সুযোগ রয়েছে। অবলোপনের আগে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ঋণের আরোপিত সুদ (সুদ আরোপ করা হলেও যা আদায় হয়নি) বাদ দিয়ে হিসাব করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, দুই বছরের মন্দ বা ক্ষতিজনিত ঋণ অবলোপন হলে এক ধাক্কায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমবে ৪৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে মন্দ ও ক্ষতিজনিত খেলাপীর পরিমাণ এক লাখ ২৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপী ঋণের ৮৭ শতাংশ। মন্দ মানের এই ঋণের মধ্যে যাদের বয়স দুই বছর হয়েছে, তাদের অবলোপন করতে পারবে ব্যাংক। বতর্মানে ব্যাংকিং খাতে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার উপরে। নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে আগামী মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপীর পরিমাণ কমে যাবে উল্লেখযোগ্য হারে।