প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির মিউনিখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের (এমএসসি) ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ভেন্যু হোটেল বায়েরিশার হফে এদিন আগের সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি। খবর বাসসের।
এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশি টাকা ও ভারতীয় রুপি বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ব্যবসা করতে পারি। এটি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে এটিকে আমাদের আরও বাড়াতে হবে। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন, আমরা সব ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার সময় কীভাবে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা যায় সে বিষয়েও তিনি বারবার আলোচনা করেছেন। বৈঠকে তারা গাজায় নিরপরাধ নারী–পুরুষের ওপর হামলা কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন, যুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধের মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর জন্য তা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তাদের জনগণকে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ এবং তিনি নিজেও যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন তার স্মৃতি স্মরণ করেন। তিনি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দিদশায় তার অমানবিক কষ্ট এবং তার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মের কথা স্মরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জেলেনস্কির মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ স্পষ্টভাবে উঠে আসে। এক প্রশ্নের জবাবে হাছান বলেন, স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যুদ্ধের পর বাংলাদেশের পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, তারা শুধু যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা করেছেন। জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মো. নূর এলাহী মিনা ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ : একই স্থানে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক ফেডারেলমন্ত্রী পৃথক বৈঠক করেন। আগের দিন শুক্রবার কাতার ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হয় শেখ হাসিনার।
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের পারস্পরিক আর বৈশ্বিক আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (এমএসসি) ২০২৪–এর ফাঁকে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শ্লোজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল বিকালে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই নেতা দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার জার্মানি যান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। সম্মেলন চলবে আজ রোববার পর্যন্ত। এতে প্রায় ৬০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গণমাধ্যম, সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রায় পাঁচশ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।