নগরের চেরাগী পাহাড়, লাভলেইন, সিআরবিসহ বিভিন্ন স্পটে রাস্তা থেকে ময়লা কুড়িয়ে নিচ্ছেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র নায়ক ফেরদৌস আহমেদ! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ক্লিন সিটি ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করতে এসে নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আবর্জনা পরিষ্কার করেন ঢাকা–১০ আসনের এ সংসদ সদস্য। ক্যাম্পেইনের প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনের পর চেরাগী পাহাড়, বৌদ্ধ মন্দির, লাভলেইন হয়ে সিআরবি শিরীষতলা পর্যন্ত শোভাযাত্রা করা হয়। এ সময় পথে পথে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলতে আহ্বান করেন রেজাউল করিম ও ফেরদৌস আহমেদ। এছাড়া মাইকিং এবং বিশেষ পরিচ্ছন্ন অভিযান চলে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৩০০ জনের একটি দল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পরিচ্ছন্ন করে। উদ্বোধনের পর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এমন কোনো জিনিস নেই নালা–নর্দমায় ফেলা হচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, মানুষের দুর্ভোগ হয়। তাই জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ‘আমরা সকলে মিলেই চট্টগ্রামকে করব পরিষ্কার’ স্লোগান দিয়ে আজকে র্যালি করছি। এটার মাধ্যমে আমরা এ সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই, বাইরে বা যেখানে সেখানে ময়লা–আর্বজনা ফেলব না। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলব।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ক্লিন সিটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছি। আমরা চাই জনগণ যাতে যত্রতত্র ময়লা, পলিথিন না ফেলে। জনগণ আমাদের সহযোগিতা করলে নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আমার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়িত হবে, গড়ে উঠবে ক্লিন চট্টগ্রাম।
তিনি বলেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আমি অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। নির্বিঘ্নে ও দূষণমুক্ত পরিবেশে চলাচলের সুবিধার্থে ঝাড়ুর কাজ এবং নালা–নর্দমা হতে মাটি–বালি ইত্যাদি উত্তোলনের কাজের শিডিউল পরিবর্তন করে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে সম্পন্ন করছি। নতুন ল্যান্ডফিল্ড, ৬টি এসটিএস স্থাপন ও নতুন আরও এসটিএস স্থাপনের কাজ চলমান আছে। মেডিকেল বর্জ্য পোড়াতে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ইনসিনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। এভাবে চট্টগ্রামের পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এ সমস্ত কার্যক্রম সফল হবে যদি জনগণ আমাদেরকে সহায়তা করে।
নায়ক ফেরদৌস বলেন, আমার প্রথম সিনেমা ‘বুকের ভিতর আগুন’ এর শুটিং করতে আমি চট্টগ্রাম এসেছিলাম। সেই সময়ের তুলনায় চট্টগ্রাম এখন অনেক উন্নত হলেও চট্টগ্রামের আগের সেই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। এ ক’দিন চট্টগ্রাম ঘুরতে গিয়ে মনে হয়েছে বর্তমানে শহরের পরিচ্ছন্নতা নষ্টের পিছনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে দায়ী। এছাড়া প্লাস্টিক–পলিথিন জলাবদ্ধতার সমস্যাও সৃষ্টি করছে। নাগরিকরা যদি সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমকে সহায়তা করেন তাহলে অচিরেই এ পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব।
তিনি বলেন, আপনাদের কী মনে হচ্ছে না চট্টগ্রাম ইউরোপের মতো আস্তে আস্তে সুন্দর হয়ে উঠছে? প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম শহরকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যখন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দেখি, বঙ্গবন্ধু টানেল দেখি, সমুদ্রের মধ্যে হাজার হাজার জাহাজ দেখি, ফ্লাইওভার দেখি, সুন্দর সুন্দর রাস্তা দেখি, তখন কি মনে হয় না আমরা বিদেশে আছি? প্রধানমন্ত্রীর সারা দেশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরের প্রতি অনেক বেশি ভালোবাসা রয়েছে।
তিনি বলেন, অনিন্দ্য সুন্দর শহর চট্টগ্রাম। কিন্তু এখানকার বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। এখানে অপরিকল্পিতভাবে অনেক বসতি গড়ে উঠেছে। আমরা যত্রতত্র ময়লা ফেলি। নিজেই নিজের শহরটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।
ফেরদৌস বলেন, আমরা জনসচেতনতা তৈরি করতে চাই। ঢাকা শহরকে নিয়ে যেভাবে কাজ করছি সেভাবে ঐতিহাসিক শহর চট্টগ্রামকে নিয়েও কাজ করার সময় এসেছে। আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে বোঝানোর জন্য এবং উদ্বুদ্ধ করার জন্য এসেছি। শহরটাকে আপনারা ঘরের আঙিনা মনে করেন। ঘরের আঙিনাকে যেভাবে পরিষ্কার রাখি, ঘরের ময়লা যেমন নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিই, ঠিক সেভাবে শহরেও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলব না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মতো এত পাহাড়, বন, ফুল ঘেরা সুন্দর শহর আর নেই। কিন্তু এ সুন্দর শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রয়োজন জনগণের সচেতন আচরণ। আজকের এ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিশেষ করে তরুণদের মাঝে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।
ক্যাম্পেইনে চসিকের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, জহরলাল হাজারীসহ অন্যান্য কাউন্সিলর, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, যুব রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট চসিক, বিডি ক্লিন ও ইপসাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শত শত নাগরিক অংশ নেন।