বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২৩টি গাড়ি পারাপারে টোলমুক্ত সুবিধা চেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পাশাপাশি কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিতে চারটি গাড়ি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সমপ্রতি সড়ক ও সেতু বিভাগে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন সিএমপির উপ–কমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এসএম মোস্তাইন হোসাইন। তিনি বলেন, টানেলে সহজে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিএমপির ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের বন্দর জোনের ২৩টি গাড়ি টোলমুক্ত রাখার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। টোলমুক্ত সুবিধা চাওয়া এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের বন্দর জোনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, টহল গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, রেকার ও ফোর্স আনা–নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। তিনি আরও বলেন, আমাদের গাড়ির সংকট আছে। টানেলের অভ্যন্তরে কোনো ঘটনা ঘটলে থানা থেকে ফোর্স আসতে সময় লাগে, সেজন্য দুই প্রান্তে আমরা দুটি করে চারটি গাড়ি স্ট্যান্ডবাই রাখার জন্য বলেছি। যাতে যে কোনো ঘটনা–দুর্ঘটনার জন্য পুলিশ দ্রুত মুভ করতে পারে। তাই টানেলের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য ডাবল কেবিনের চারটি গাড়ি চাওয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর–বাইরে ধারাবাহিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধনের পরদিন থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। টানেলের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে নৌবাহিনী। উদ্বোধনের পরদিন থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাতটি দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে টানেলের ভেতরে ঘটেছে তিনটি দুর্ঘটনা। বাকি চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে টানেলের উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়কে। এসব দুর্ঘটনার পর আইনি কার্যক্রমের জন্য ডাক পড়েছে পুলিশের। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রম ও আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়ে পুলিশের গাড়িকে টোল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনার পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম বলেন, একসঙ্গে কয়েকটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিল। আমাদের ডাকার পর আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আহতদের উদ্ধার করে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে ফেরার পথে আমার গাড়ি ছাড়া অপর দুইটি মোবাইল গাড়িকে টোল পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে টানেলে প্রবেশ করলে বের হতে হয় অপর প্রান্তে। ফলে পতেঙ্গা থানার যেসব গাড়ি টানেলে প্রবেশ করে সেগুলোকে ফিরে আসতে হয় অপর প্রান্ত হয়ে। যার কারণে টানেলে প্রবেশ ও বাহির উভয়ক্ষেত্রে টোল দিতে হয়।
সিএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব’ ও ‘বঙ্গবন্ধু টানেল পশ্চিম’ নামে দুটিসহ মোট চারটি থানা স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরে। যাচাই–বাছাইয়ের পর সেই প্রস্তাবটি ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন চারটি থানা স্থাপনের সুপারিশসহ প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর দুই বছর পরেও সিএমপির থানা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন পায়নি। অবশ্য নতুন থানা অনুমোদনের আশার কথা জানা গেছে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায়। ওই সভায় টানেলের দুই প্রান্তের দুটিসহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন চারটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে টানেল কর্তৃপক্ষ পুলিশের জন্য দুটি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করেছে। নতুন থানা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত ওই দুই ভবনে ফাঁড়ির কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে সিএমপি। বর্তমানে কর্ণফুলী ও পতেঙ্গা থানা টানেলে পুলিশি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করলেও দূরত্ব এবং শিল্পজোন হওয়ার কারণে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।