রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চবি রণক্ষেত্র

৩ দিনে ৭ বার সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক ।। নেপথ্যে ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দুই উপগ্রুপের টানা দ্বিতীয় দিনের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে চবি ক্যাম্পাস। এতে হলের সামনের অন্তত দশটি দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাবার দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। দুই পক্ষেরই দাবি তাদের কর্মীকে মারধরের জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনার নেপথ্যে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এ নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না কেউ এবং ছাত্রলীগ নেতারাও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো। নিজেদের আধিপত্য দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই এ সংঘর্ষের নেপথ্য কারণ বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া গত পাঁচ বছরের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ছাত্রলীগ। এমনকি পরীক্ষার সময়ও সংঘর্ষ করেছে নানা উপগ্রুপ। এসময় তাদের একটি ‘পার্সেন্টেজ’ দিয়ে শান্ত করেছে প্রশাসন। পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এ ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রশাসনের সুবিধার্থে ছাত্রলীগকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। যদিও এসব বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চান না কেউই। গত তিন দিনে অন্তত সাত বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে তিনটি উপগ্রুপ। গত বুধবার রাতে সংঘর্ষে জড়ায় বিজয় ও সিক্সটি নাইন উপগ্রুপ। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। বৃহস্পতিবার রাতে সিএফসির সাথে সংঘর্ষ হয় সিক্সটি নাইনের। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটা থেকে রাতের প্রায় আটটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ককটেল বিস্ফোরণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া সব ঘটনায় রাম দা, লাঠিসোটা ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে শাহজালাল, শাহ আমানত ও আবদুর রব হল তল্লাশি চালায় প্রশাসন। এসময় চারটি রাম দা, কিছু লাঠিসোটা ও রড ছাড়া কিছুই পায়নি প্রশাসন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১১টায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিলো ক্যাম্পাসে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাজিদ মোস্তফা আশফি আজাদীকে বলেন, ‘মূলত কমিটি না থাকায় ঝামেলা হচ্ছে। নেতৃত্ব না থাকায় কেউ কাউকে মানছে না। অনেকে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছে তাদের আর্থিক সুবিধারও দরকার হচ্ছে।’ ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে প্রশাসন টাকা দেয় না। তবে কেউ শিক্ষার্থীদের উপকারে কিছু করতে চাইলে তাদের সহযোগিতা করে।’

অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সরাসরি কিছু বলতে পারবো না। তবে কোনো অভিযোগ তো উড়িয়েও দেওয়া যায় না। আমার মতে, রানিং শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব থাকলে এ ধরনের অভিযোগগুলো আসবে না।’ এ প্রশাসন যেকোনো ইস্যুতে লেনদেনে বিশ্বাসী মন্তব্য করেন চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আবদুল হক। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের এ ঘটনার নেপথ্যের ব্যাপারে আমি সঠিক জানি না। তবে এ প্রশাসন কোনো কিছুই করার সক্ষমতা রাখে না এবং যেকোনো ইস্যুতেই লেনদেনে বিশ্বাসী। এছাড়া প্রশাসন যেহেতু নানা রকম লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা দেয় এবং নেয় তাই এ সুযোগটা যে কেউই কাজে লাগাতে পারে।’

বিবদমান সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের নেতা সাইদুল ইসলাম সাঈদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সাথে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো ভিত্তিহীন কথা। সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি আছে। যার কারণে এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে। সিএফসির নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আমাদের ছেলেকে মেরে ঝামেলা শুরু করেছে। সুতরাং তারা বলতে পারবে তাদের উদ্দেশ্য কী। প্রক্টরিয়াল বডি চাইলে গতকালই বিষয়টা সমাধান করতে পারতো। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘটনাটা বড় হচ্ছে।

উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। প্রক্টর প্রফেসর ড. নূরুল আজিম সিকদারও সাড়া দেননি। সহকারী প্রক্টর রোকন উদ্দিন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় আজাদীকে বলেন, তিন হলে আমরা চারটি রামদাসহ কিছু লাঠিসোটা ও রড পেয়েছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। লেনদেন সংক্রান্ত এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত চবি শিক্ষক চাকরিচ্যুত
পরবর্তী নিবন্ধতিনশ ফুট উঁচু পাহাড়ের ঢালে টমেটো চাষ