আমাদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জবর দখল হয়ে যাচ্ছে : ইউনূস

| শুক্রবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে ১৪ তলা টেলিকম ভবনে ‘গ্রামীণ পরিবারের’ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ‘জবর দখল’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওই ভবনে থাকা আটটি অফিস দখল করে তালা মেরে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে আইনি সহায়তা চেয়েও তারা পাননি। সমপ্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের তরফ থেকে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালক পদে কয়েকজনকে মনোনীত করার পাশাপাশি এ দুই কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে ইউনূসের বদলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদকে মনোনীত করা হয়। ইউনূসের ভাষায়, এটা দেশবাসীর সামনে তাকে ‘হয়রানি’ করা এবং তার সামাজিক ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানকে ‘ধ্বংস করার নীলনকশা’ ছাড়া আর কিছু নয়। খবর বিডিনিউজের।

শ্রম আইনের একটি মামলায় ইউনূসের সাজা এবং আরেক মামলায় তার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র অনুমোদন নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে টেলিকম ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন ইউনূস, যিনি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দীর্ঘদিন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ঘর জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম, একটা জিডি করেছিলাম। জিডির কপি নিয়ে পুলিশ এসেছিল, কিন্তু কোনো সমাধান দেয়নি। আমরা অফিস করতে পারছি না।’

গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম এবং গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ ও ফরিদা আখতার সংবাদ সম্মেলনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ইউনূসের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ এবং চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। ফোন ধরেননি ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা এবং শাহ আলী থানার ওসি মওদুদ হাওলাদারও।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালেও কয়েকজন নারী ঝাড়ু হাতে টেলিকম ভবনের সামনে মিছিল করেন। তারা কেউ ইউনূসের কাছে টাকা পান বলে দাবি করেন, আবার কারো দাবি, মোবাইলের কল রেট অনেক বেশি এ কারণে তারা ঝাড়ু হাতে নেমেছেন।

সেই প্রসঙ্গ ধরে ইউনূস বলেন, ‘এভাবে দেশ চলছে কীভাবে। আমাদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল হচ্ছে। আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব।’

সমপ্রতি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় শ্রম আদালত। এছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেক মামলায় ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুদক। সরকারের ‘ইচ্ছাতেই’ এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ইউনূস।

১২ ফেব্রুয়ারি কী ঘটেছিল : টেলিকম ভবনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ইউনূসের লিখিত বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হয়। সেখানে বলা হয়, মিরপুরের ওই ভবনে ইউনুস সেন্টার, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ ১৬টি গ্রামীণ সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। ১২ ফেব্রুয়ারি অফিস ছুটির পর বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ‘সাদা পোশাকধারী ৩৫ জন অপরিচিত ব্যক্তি’ জোর করে ভবনে প্রবেশ করেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এসেছেন জানিয়ে তারা গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের অফিসে যেতে চান।

এরপর তারা উপস্থিত কর্মকর্তাকর্মচারীদের আইডি কার্ড পরীক্ষা করা শুরু করেন এবং অফিস ত্যাগ করতে ‘বাধা দেন’। তারা গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে বলেন, ওই দুই প্রতিষ্ঠানে নতুন চেয়ারম্যান ও নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সেদিন রাত ৯টার পর গ্রামীণ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি সেই নিয়োগ আদেশ নিয়ে টেলিকম ভবনে আসেন এবং গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। সেসব আদেশে গ্রামীণ টেলিকমে তিনজন এবং গ্রামীণ কল্যাণে দুইজন পরিচালক মনোনীত করার কথা জানানো হয়। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একেএম সাইফুল মজিদ নিজেই নিজেকে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনীত করেন। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আপত্তি জানানো হয়। তবে ড. ইউনূসের এ অভিযোগের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ভাষ্য এখনও আসেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০
পরবর্তী নিবন্ধলক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ শতাংশ কম গাড়ি চলছে টানেলে